বার কাউন্সিল অর্ডার ও রুলস, আচরণবিধি
বার কাউন্সিল অর্ডার ও রুলস, আচরণবিধি ইত্যাদি নিয়ে বার কাউন্সিলের সিলেবাসে যা যা আছে সেগুলো সবই একসাথে এখানে আলোচনা করা হলো। মূলত এখানে গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ ও বিধিগুলোর সারমর্ম করে দেওয়া আছে। এর মূল আইনগুলো চিরুনি অভিযান বইয়ে তুলে দেওয়া থাকলেও ওয়েবসাইটে তুলে দিতে পারলাম না। মূল আইনটির বাংলা অংশের পরেপরেই মূল ইংরেজি ভার্সনও তুলে দেওয়া আছে যেন চাইলে সেটিও দেখে নিতে পারেন।
আলোচিত বিষয় :
১। দি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২।
২। দি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল রুলস, ১৯৭২।
৩। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গঠন ও কার্যাবলী।
৪। বার কাউন্সিল ও বার এসোসিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য।
৫। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের গঠন, এখতিয়ার এবং কার্য পদ্ধতি।
৬। আইনজীবীদের আচরণ সম্পর্কে নীতিমালা।
উল্লিখিত এই ৬টি বিষয় বোঝাপড়ার মধ্য দিয়েই সিলেবাস অনুযায়ী আমাদের পড়াশোনা সম্পন্ন হবে। প্রথমে এই বিষয়বস্তুসমূহের আলোচনার সারসংক্ষেপ দেওয়া আছে। এই অংশ থেকে নাম্বার তোলা তুলনামূলক সহজ।
যে আইনের মাধমে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর প্রতিষ্ঠা সেই আইনটি হচ্ছে দি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র মোতাবেক রাষ্ট্রপতির উপরে যে ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয় সেই ক্ষমতায় তিনি বেশ কিছু আদেশ প্রদান করে। তারই একটি দি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২। এই আদেশের তিনটি প্রতিষ্ঠানের গঠনের কথা উল্লেখ করা আছে-
১। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল
২। বার এসোসিয়েশন
৩। বার ট্রাইব্যুনাল
বার কাউন্সিল
বাংলাদেশ আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণ, তাদের পেশাগত সুবিধা প্রদান, নতুন আইনজীবীদের তালিকাভুক্ত করণ, পেশাগত অসদাচরণের বিচার এবং দেশের আইন শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নয়ন এর নীতি নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। এককথায় দেশের আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কাজ করে থাকে।
বার কাউন্সিলের গঠন
বার কাউন্সিলের গঠন সম্পর্কে দি লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স এ- বার কাউন্সিল অর্ডার এর অনুচ্ছেদ ৩, ৪, ৫, ৫ক, ৬ এবং ৬ক তে আলোচনা করা আছে।
অনুচ্ছেদ ৩ অনুযায়ী বার কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে এবং এই অনুচ্ছেদে বার কাউন্সিলের প্রকৃতি আলোচনা করা হয়েছে, এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে,
১। এটি একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান হবে।
২। চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার থাকবে।
৩। একটি সাধারণ সিলমোহর থাকবে।
৪। স্থাবর এবং অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি ধারণের অধিকারী হবে।
৫। চুক্তির পক্ষ হওয়ার অধিকারী হবে।
৬। এর বিরুদ্ধে যে কেউ মামলা করতে পারবে।
৭। বার কাউন্সিল অন্য যে কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে।
অনুচ্ছেদ ৪ এ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ এবং মেয়াদ শুরু হবার দিন এর বিষয়ে বলা আছে। ৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বার কাউন্সিলের কমিটি গঠিত হবে ৩ বছরের জন্য এবং তা নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হবে। সাধারণ নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরবর্তী জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে উক্ত কমিটি তাদের যাত্রা শুরু করে। অর্থাৎ প্রতি তিন বছর পর পর জুলাইয়ের আগে সাধারণ নির্বাচন করে কাউন্সিল গঠন করতে হবে। উল্লেখ্য, যেই বছর কমিটির মেয়াদ শেষ হবে সেই বছরের ৩১শে মে এর পূর্বে পরবর্তী তিন বছরের জন্য কমিটি নির্বাচন এর নির্বাচন কাজ শেষ করতে হবে [অনুচ্ছেদ-৮]।
অনুচ্ছেদ ৫ এ মূলত বার কাউন্সিলের কমিটির গঠন আলোচনা করা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বার কাউন্সিল গঠিত হবে ১৫ সদস্য নিয়ে। এই কমিটিতে থাকবেন-
১. বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে এই কমিটিতে থাকবেন।
২. বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের সাধারণ ভোটে নির্বাচিত ৭ জন আইনজীবী এই কমিটির সদস্য হবেন।
৩. সরকার তার গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সমগ্র দেশকে ৭টি বার এসোসিয়েশনে ভাগ করবে। এসকল স্থানীয় এসোসিয়েশনের আইনজীবীদের সাধারণ ভোটে প্রতিটি এসোসিয়েশন থেকে ১ জন করে ৭ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন।
উপরোক্ত ১ + ৭ + ৭ = ১৫ জন সদস্য নিয়ে বার কাউন্সিল গঠিত হবে।
অনুচ্ছেদ ৫ক এ বার কাউন্সিল এর সদস্যদের পদের মেয়াদ সম্পর্কে বলা আছে। এখানে বলা আছে- একজন বার কাউন্সিলের সদস্য একটানা ২ বার এর বেশি বার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে থাকতে পারবে না। অর্থাৎ ৩ বছর করে দুইবারের মেয়াদে সর্বোচ্চ ৬ বছরের বেশি একটানা বার কাউন্সিলের কমিটির সদস্য থাকতে পারবে না।
অনুচ্ছেদ ৬ এ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান এর বিষয়ে আলোচনা করা আছে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী-
১। দেশের এটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন।
২। বার কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে ভাইস চেয়ারম্যন নির্বাচিত হবেন।
৩। চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান এর কাজ ও ক্ষমতা এই বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে।
অনুচ্ছেদ ৬ক অনুযায়ী সরকার জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার একজনকে বার কাউন্সিলের সচিব বা সেক্রেটারি নিয়োগ করবেন।
বার কাউন্সিলের কার্যাবলী সম্পর্কে অনুচ্ছেদ ১০ এ কিছু বিষয় বর্ণিত আছে। সেগুলো প্রধানত নিম্নরূপ-
১. এডভোকেটদের তালিকাভুক্তি করা এবং তালিকা থেকে বাদ দেওয়া
২. এডভোকেটদের তালিকা তৈরী ও সংরক্ষণ
৩. এডভোকেটদের পেশাগত আচরণ, শিষ্টাচারের মান উন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণে বিধি প্রণয়ন
৪. এডভোকেটদের অসদাচরণ নিরূপণ ও শাস্তি প্রদান
৫. তাদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কিত স্বার্থ রক্ষা
৬. বার কাউন্সিল ফান্ড গঠন ও বিনিয়োগ
৭. বার কাউন্সিলের সদস্যদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করা
৮. কমিটির মাধ্যমে অনুসরণযোগ্য বিধি প্রণয়ন
৯. দেশের আইন শিক্ষার মান নির্ধারণে বিধি প্রণয়ন
১০. এই আদেশে অনুমোদিত অন্যান্য কাজ পরিচালনা করা
১১. বার কাউন্সিলের কার্যাবলী তদারিক করার জন্য যা যা করা দরকার তার ব্যবস্থা করা।
অনুচ্ছেদ ১০ এ উল্লিখিত কাজসমূহ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য বার কাউন্সিল কিছু স্থায়ী কমিটি তৈরী করবে। অনুচ্ছেদ ১১ এবং ১১ খ তে বার কাউন্সিলের সেই কমিটি নিয়ে বলা আছে।
অনুচ্ছেদ ১১ এবং ১১খ অনুযায়ী বার কাউন্সিলের কমিটি হবে প্রধানত নিচের ৪টি। এগুলো বাদেও আরো কমিটি গঠন করতে পারবে প্রয়োজন অনুযায়ী।
১. নির্বাহী কমিটি
২. অর্থ কমিটি
৩. আইন শিক্ষা কমিটি
৪. তালিকাভুক্তিকরণ বা এনরোলমেন্ট কমিটি
নির্বাহী কমিটিতে নির্বাচনের মাধ্যমে বার কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে থেকে ৫ জন সদস্য নিয়ে নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে। আর অর্থ কমিটির ক্ষেত্রেও একইভাবে বার কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে ৫ জন সদস্য নিয়ে এ কমিটি গঠিত হবে। তবে আইন শিক্ষা কমিটির গঠন খানিকটা ভিন্ন। এটি বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন।
১. এ কমিটির সদস্য হবে ৯ জন।
২. এর মধ্যে ৫ জন হবে বার কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত।
৩. অন্য ৪ জনের মধ্যে ন্যূনতম ২ জন ব্যক্তি হবেন দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের আইন শিক্ষক।
তালিকাভুক্তিকরণ কমিটি বা এনরোলমেন্ট কমিটি বিষয়ে ১১খ অনুচ্ছেদে বলা আছে। এই তালিকাভুক্তিকরণ কমিটির গঠনটিও বার কাউন্সিলের পরীক্ষার্থী হিসেবে অবশ্যই জানতে হবে।
১. এ কমিটির সদস্য হবে ৫ জন।
২. প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক হবে এ কমিটির চেয়ারম্যান।
৩. প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত ২ জন হাইকোর্ট এর বিচারপতি থাকবেন এই কমিটিতে।
৪. বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল থাকবেন এই কমিটিতে।
৫. বার কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্য থেকে একজন নির্বাচিত সদস্য হবে এ কমিটির সদস্য।
বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল
বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের গঠন, এখতিয়ার এবং কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে দি লিগ্যাল প্রাকটিশনারর্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৩৩ থেকে ৩৮ এর ভেতরে আলোচনা করা আছে।
অনুচ্ছেদ ৩৩ অনুযায়ী বার কাউন্সিল এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের গঠনকারী প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
১. বার কাউন্সিল ট্রাইবুনাল গঠন হবে ৩ সদস্যের সমন্বয়ে।
২. তিনজন সদস্যদের মধ্যে ২ জন থাকবে বার কাউন্সিলের সদস্য যারা বার কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্য দ্বারা নির্বাচিত হবে।
৩. অপর একজন সদস্য হবে বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের মধ্যে থেকে একজন যাকে মনোনয়ন দিবে বার কাউন্সিল।
৪. তিন সদস্যদের মধ্যে যিনি বয়োঃজ্যেষ্ঠ্য হবেন তিনি হবেন ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান।
৫. বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল কোনো ট্রাইব্যুনালের সদস্য হতে পারবেন না।
বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল বিষয়ে উক্ত অনুচ্ছেদগুলো বিস্তারিত পড়ে নেবেন।
আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির যোগ্যতাসমূহ:
আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির যোগ্যতাসমূহ অনুচ্ছেদ ২৭ এ আলোচনা করা আছে। অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী-
১. তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
২. ২১ বছর বয়স পূর্ণ হতে হবে।
৩. বাংলাদেশের কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।
৪. বাংলাদেশের বাহিরে বার কাউন্সিল স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে, অথবা তাকে ব্যারিস্টার হতে হবে।
৫. তাকে বার কাউন্সিল নির্ধারিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে হবে।
৬. নির্ধারিত পন্থায় বার কাউন্সিল নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।
৭. যিনি ন্যূনতম ৭ (সাত) বছর মোক্তার হিসেবে কাজ করেন, তিনি ২৭ অনুচ্ছেদের দফা ১ এর উপ দফা (ক), (খ), (ঘ), এবং (ঙ) দফার শর্তসমূহ পালন করে আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির অযোগ্যতা সমূহ
১. যদি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কোনো সরকারি চাকুরি থেকে অপসারিত হয়, তবে অপসারণের মেয়াদ ২ বছর পূর্ণ না হওয়ার আগ পর্যন্ত আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হবার আবেদন করা যাবে না।
২. নৈতিক স্খলনজনিত কারণে যদি শাস্তিপ্রাপ্ত হয়, তবে শাস্তি প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৫ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হবার আবেদন করা যাবে না।
বার কাউন্সিল ও বার এসোসিয়েশন
বার কাউন্সিল কি সেটি আমরা আগেই জেনে আসলাম। অনেকেই বার কাউন্সিল ও বার এসোসিয়েশনের ভেতর পার্থক্য করতে পারেন না। বার কাউন্সিল হলো- নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। এটি বার এসোসিয়েশনগুলোকে এবং আইনজীবীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
বার এসোসিয়েশন হলো বিভিন্ন জেলার আইনজীবীদের সমিতি বা সংগঠন। এটি প্রতিটি জেলায় একটি করে থাকে এবং সেই জেলার সমস্ত আইনজীবীদেরকে নিয়ে গঠিত হয়। যেমন, ঢাকা বার এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বার এসোসিয়েশন, জয়পুরহাট বার এসোসিয়েশন ইত্যাদি। এই বার এসোসিয়েশন তার সংশ্লিষ্ট জেলার আইনজীবীদের স্বার্থ রক্ষা, কল্যান ফান্ড ইত্যাদি কাজে কাজ করে থাকে। এ রকম কোনো জেলার কোনো বার এসোসিয়েশনকে স্থানীয় বার এসোসিয়েশন বলা হয়।
আবার, সমস্ত জেলার আলাদা আলাদা বার এসোসিয়েশন বাদে শুধু হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন এমন আইনজীবীদেরকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন এর অস্তিত্বও আছে।
তার মানে দেশে দুই ধরনের বার এসোসিয়েশন আছে। একটি হলো- সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন এবং অন্যটি হলোÑ স্থানীয় বার এসোসিয়েশন বা জেলার বার এসোসিয়েশন।
আইনজীবীদের পালনীয় আচরণ বিধি
বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ এবং আইন পেশার গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য বেশ কিছু নীতিমালা তৈরী করা হয়েছে। এই নীতিমালা Bangladesh Bar Council Canons of Professional Conduct and Etiquette নামে পরিচিত। আইনগত সহায়তা গ্রহণের জন্য বা কোনো মোকদ্দমা করতে এসে কোনো ব্যক্তি যেনো প্রতারিত বা হয়রানির শিকার না হয়, তার জন্য আইনজীবীদের সাথে মক্কেলের সম্পর্কের ব্যাপারেও এই নীতিমালায় বলা আছে। এর ৪টি চ্যাপটারে যথাক্রমে
১. অন্যান্য আইনজীবীদের প্রতি আচরণ
২. মক্কেলদের প্রতি আচরণ
৩. আদালতের প্রতি কর্তব্য
৪. জনসাধারণের প্রতি আচরণ
-এই বিষয়সমূহ বর্ণিত আছে। নিচে এর প্রতিটির সারসংক্ষেপ তুলে দেওয়া হলো। আপনারা মূল নীতিমালাটিও পড়ে নেবেন।
অন্যান্য আইনজীবীদের প্রতি আচরণ
বার কাউন্সিলের একজন তালিকাভুক্ত আইনজীবী অন্যান্য আইনজীবীদের সাথে কিরকম ব্যবহার করবে তার নীতিমালা তৈরী করা হয়েছে। এর প্রধান দিকগুলো নিম্নরূপ-
১. আইনজীবী হিসেবে নিজের ব্যক্তিগত মর্যাদা এবং পেশার মর্যাদা সমুন্নত রাখা আইনজীবীর কর্তব্য।
২. নিজের পেশাগত কোনো বিজ্ঞাপণ প্রচার করতে পারবে না; তবে, পেশাগত কার্ড, নামফলক বা ডাইরেক্টরিতে নাম তালিকাভুক্তিতে বাধা নেই।
৩. পেশাগত কাজের যোগান দেয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ বা বেতন দিতে পারবে না।
৪. আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে প্রতিপক্ষের সাথে মামলার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে না।
৫. প্রতিপক্ষের আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে বা মামলার বিচারাধীন বিষয়ের কপি বা নথি প্রদান করে তা আদালতের সামনে উপস্থাপন করবে না।
৬. মক্কেল একটি মামলার ক্ষেত্রে একাধিক আইনজীবী নিয়োগ করতে চাইলে, আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে মক্কেলকে বাধা দেওয়া যাবে না।
৭. আইনজীবীগণ নিজেদের মধ্যে বিবাদ পরিহার করে চলবে।
৮. আইনজীবীগণ কাজের বিষয়ে সম্পাদিত সুস্পষ্ট চুক্তির নীতিমালা অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে ফিস বণ্টন করবেন।
৯. এটর্নি জেনারেলের কার্যাবলী সমুন্নত রাখা প্রত্যেক আইনজীবীর কর্তব্য।
১০. জুনিয়র আইনজীবীগণ সিনিয়র আইনজীবীদের সম্মান করবে এবং সিনিয়র আইনজীবীগণ জুনিয়র আইনজীবীদের কাজের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।
১১. একটি মামলায় একাধিক আইনজীবী থাকলে জৈষ্ঠ্য আইনজীবী মামলা পরিচালনা করবে।
মক্কেলগণের প্রতি আচরণ
১. আইনজীবী কখনো মক্কেলের সম্পত্তির প্রতি আসক্ত হবে না।
২. কোনো মক্কেল দ্বারা পূর্বে বা বর্তমানে নিযুক্ত কোনো আইনজীবী যিনি মামলা সম্পর্কিত বিষয়ে মক্কেলের কোনো গোপন তথ্য জানে তিনি তার বিপক্ষে আদালতে মামলা লড়তে পারবে না।
৩. একজন আইনজীবী যদি তার বিরুদ্ধ পক্ষের সঙ্গে কোনো স্বার্থ থাকে তবে তা প্রকাশ না করে পেশাগত নিয়োগ গ্রহণ করতে পারবে না।
৪. একজন আইনজীবী কখনোই উভয় পক্ষের মামলা পরিচালনা করবেন না।
৫. কোনো আইনজীবী নিজের নামে বা বেনামে মামলার বিষয়বস্তু যেমন, বন্ধকী সম্পত্তি নিলাম সম্পত্তি ক্রয় করবে না বা কাজের পারিশ্রমিক বা দান হিসেবে বিবাদমান সম্পত্তির সম্পূর্ণ বা আংশিক গ্রহণ করবে না।
৬. কোনো আইনজীবী তার নিজের সম্পত্তির সাথে মক্কেলের সম্পত্তি একত্রিত বা মিশিয়ে ফেলবে না।
৭. কোনো আইনজীবী নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়ে কোনো মামলার বাদী বা বিবাদীকে কোনো পরার্শ দিবে না।
৮. কোনো আইনজীবী কাউকে আইনভঙ্গের পরামর্শ দিবে না।
৯. আইনজীবী পরামর্শ বা সেবা প্রদানের জন্য যথাযথ পারিশ্রমিক গ্রহণ করবে। এছাড়াও কোনো আইনজীবীর অনুরোধ বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে। একজন আইনজীবীর বিধবা স্ত্রী ও এতিম সন্তানদের অন্যান্য সকল আইনজীবী বিনা ফিসে আইনগত সহায়তা প্রদান করবে।
১০. একজন আইনজীবী নিজের সম্মানের জন্য তার মক্কেলের সাথে ফি বা পারিশ্রমিক সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধ পরিহার করবেন।
১১. মামলা পরিচালনার সময় ব্যক্তিগত বিশ্বাস বর্ণনা পরিহার করা উচিত।
১২. আইনজীবী নিজেই কোনো মামলার সাক্ষী হলে সেই মামলা তিনি নিজে না করে অন্য কোনো আইনজীবীর হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
১৩. বিশেষ কারণ ব্যতীত অন্য কোনো আইনজীবীকে বিশেষ কোনো দিনে মামলা করার জন্য বাধ্য করা যাবে না।
আদালতের প্রতি কর্তব্য
১. আদালতে ভদ্রতার সাথে উপস্থিত হতে হবে।
২. মামলার বিরুদ্ধে উপদেশ দিবেন না।
৩. কখনো কোনো ভুল তথ্য বা অপব্যাখ্যা দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করবেন না।
৪. বিচারকের খাস কামরায় মামলার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন না।
৫. সরকারি আইনজীবীর দায়িত্ব ন্যায় বিচারের সহায়তা করা, অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া নয়। তাই সরকারি আইনজীবী সাক্ষ্য গোপন বা চাপিয়ে রাখবেন না।
৬. বিচারাধীন কোনো বিষয় সম্পর্কে খবরের কাগজে কোনো তথ্য প্রকাশ না করা।
৭. বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে যাতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করা না হয় সেই দিকে আইনজীবীদের চেষ্টা বা তা প্রতিহত করা উচিত।
৮. আইনজীবীর সময়মতো আদালতে উপস্থিত হওয়া উচিত।
৯. আদালত আহ্বান করলে নিরপেক্ষ আইনগত মতামত উপস্থাপন করা।
জনগণের প্রতি দায়িত্ব
১. কোনো মামলা বিলম্বিত করা বা কাউকে বিরক্ত করা ও হয়রানি করার জন্য কোনো আইনজীবী কোনো মামলা গ্রহণ করবে না।
২. বিরুদ্ধ পক্ষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন।
৩. কাউকে হয়রানি বা ক্ষতি করার জন্য কোনো দেওয়ানি মামলা দায়ের বা প্রতিবন্ধকতা তৈরী করবে না।
৪. কোনো আইনজীবী কোনো মামলার জন্য নিযুক্তি হতে বাধ্য নয়। তবে নিযুক্তি গ্রহণ করলে দায়িত্বের সঙ্গে তা গ্রহণ করতে হবে।
৫. কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা রাজনৈতিক মামলা যতোই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন।
৬. কোনো পাবলিক অফিসার বোর্ড, কমিটি বা সংস্থার সামনে উপস্থিত হলে তিনি তার পরিচয় এবং যার পক্ষে উপস্থিত হয়েছে তার পরিচয় প্রকাশ করবে।
৭. কোনো বিষয়ে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে সে বিষয়ে আইনজীবী হিসেবে নিযুক্তি গ্রহণ করবে না।
৮. একজন আইনজীবী অন্য কোনো পেশা, ব্যবসা বা বেতনভুক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসেবে কোনো ব্যবসা বা পেশার সাথে যুক্ত হবেন না।
হাইকোর্টে আইন পেশা
আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ২৭ এ বলা আছে। সেটি আমরা দেখে আসলাম আগেই। তবে এর ডিটেইল কার্যপ্রক্রিয়া তথা আবেদনের বিস্তারিত নিয়মাবলী এর রুলস এ বলা আছে।
তালিকাভুক্তির নিয়মাবলী
১. তালিকাভুক্তির জন্য ‘অ’ ফরমে আবেদন করতে হবে [বিধি : ৫৮]
২. আবেদন পত্রের সাথে সংযুক্তিসমূূহ যা যা থাকবে [বিধি : ৫৯]
ক. জন্ম তারিখের সন্তোষজনক প্রমাণ
খ. শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র
গ. চরিত্র ও আচরণ সম্পর্কে প্রমাণপত্র
ঘ. ‘অ’ ফরমের দরখাস্তের এফিডেভিট
ঙ. ফি জমা দানের রশিদ
৩. বার কাউন্সিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। বিলম্বিত জমাদান এর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি ২০০ টাকা। [বিধি-৫৩এ]
৪. কমপক্ষে ১০ বছর আইন পেশায় নিয়োজিত এমন কোনো এডভোকেট এর নিকট ৬ মাসের শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে থাকতে হবে। [বিধি: ৬০]
৫. শিক্ষানবিশ থাকা অবস্থায় কমপক্ষে ১০টি মামলায় তার সিনিয়রের সাথে আদালতে উপস্থিত থেকে সিনিয়রকে সহায়তা করতে হবে। এক্ষেত্রে ৫টি ফৌজদারি এবং ৫টি দেওয়ানি মামলা হতে হবে। [বিধি : ৬০]
BBC 01
কুইজটি শুরু করতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন।
E