অনলাইন জুম ক্লাসে

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

২৪ জুন থেকে শুরু

তথ্য জানতে / ভর্তি হতে : 01309-541565

মুসাবিদায় মুসিবত? ছুহ মন্তর ছুহ!! [A Comprehensive guideline on legal drafting]

ড্রাফটিং নিয়ে অনেকেই বিচিত্র প্রবলেমে ভুগছেন।

প্রথম সীমাবদ্ধতা শিক্ষার্থীদের নিজেদের, কেননা তারা কোর্টেই যান না বেশিরভাগ। কোর্টে একেকটি চেম্বারে বা সিনিয়রের টেবিলে একাধিক দরখাস্ত ও আরজির কাজ প্রতিদিনই হয় কোনো না কোনোভাবে। কোনো কোনো টেবিলে প্রতিদিন ৪/৫ টি করে আরজি লিখতে ও জমা দিতে হয়। দরখাস্ত তো আরো বেশি লিখতে হয় বলাই বাহুল্য। তাহলে ১ সপ্তাহ কোর্টেও যদি কেউ নিয়মিত যায় এবং দুপুরের বিরতির সময়ে সিনিয়রের কাছে প্রতিদিনকার দরখাস্তগুলো একবার করে বুঝে নেয়া যায় তাহলেই সিংহভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবার কথা। অথবা সিনিয়র হয়তো তেমন হেল্প করার সময়ও পান না; কিন্তু নিজের গরজ তো থাকতে হবে!

দ্বিতীয়ত, বাজারের প্রচলিত গাইড বইগুলোতে কোনো সিস্টেমেটিক পদ্ধতিতে গুছিয়ে লেখা হয়নি। প্রশ্নে চেয়েছে, বা বিগত সালের আসা প্রশ্ন তুলে দিয়ে সরাসরি উত্তর লিখে ফেলেছে। উত্তর লিখে দেয়ার চেয়ে এর সম্পর্কিত কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনারও দরকার ছিলো। সেটার অভাব আছে। তবে, আমাদের প্রকাশিতব্য [জুন মাসের শেষ সপ্তাহে কুরিয়ারে সংগ্রহ করা যাবে] বইতে এই আলোচনাটিই আরো বিস্তারিত থাকবে।

তৃতীয়ত, এটাও সত্য যে, বিভিন্ন জেলার আদালতগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন কাঠামোতে বিন্যস্ত করা হয়ে থাকে ড্রাফটিং; এমনকি ভাষাগত কাঠামোও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ফলে যিনি যেই কোর্টের সাথে অভ্যস্ত সেই কোর্টের ধরনেই সমাধান দিয়ে থাকেন। এটাই স্বাভাবিক। ফেসবুকে দেখলাম যে, শিক্ষানবিশগণ পরস্পর তর্ক করছেন এবং নিজ নিজ সিনিয়রের কার আরজি ফেসবুকে দেখাচ্ছেন যে, তারটিই সঠিক নিয়মে করা হয়েছে। কিন্তু দুইটিই সঠিক ছিলো। যেমন ধরুন, কোনো জেলা কোর্টে মোকদ্দমার তায়দাদ মূল্য বা মোকদ্দমার বিষয়বস্তুর মূল্য বাদী-বিবাদীর নামের অংশের পরেই বোল্ড-আন্ডারলাইন করে দেওয়া থাকে যেন আর্থিক এখতিয়ার প্রথম পৃষ্ঠাতেই চোখে পড়ে; আবার কোনো জেলা কোর্টে দেখা যায় যে, এই বিষয়বস্তুর মূল্যের কথা আরজির মূল বডি’র ভেতরে থাকে একটি পয়েন্ট আকারে। সেখানে আবার দুই-চার লাইন বলাও থাকে যে, মোকদ্দমার বিষয়বস্তুর মূল্য অনুসারে সঠিক কোর্টেই মোকদ্দমাটি দায়ের করা হয়েছে।

চতুর্থত, এটাও বিবেচনায় রাখা দরকার যে, ড্রাফটিং একদিনেই শিখে ফেলা সম্ভব নয়। অথবা কোনো বিশেষ ফরম্যাট বা ফর্মুলা ব্যবহার করে খানিকটা আয়ত্বে নিলেও এ বিষয়ে পারফেকশন আনা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যখন সত্যি সত্যি একজন মক্কেলের কোনো প্রতিকার পাইয়ে দিতে আপনি একটি ড্রাফট বা আরজি লিখে ফেলবেন, তখন দেখা যাবে যে, একটি বাস্তব-ব্যবহারিক প্রয়োজনেই ক্রমে ভালো ড্রাফটিং করতে সক্ষম হবেন।

কিন্তু, কবে কাঠাল পাকবে, সেই অপেক্ষায় দিন সাবাড় করে দেবারও উপায় নেই। বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার জন্য খানিকটা মনোযোগী পরিশ্রম করতেই হবে। পরীক্ষার্থীদের জন্য খুব ভালো মানের আরজি বা দরখাস্ত লিখতে জানতে হবে এমনটা নয়। কিন্তু এর কাঠামোতে এবং বর্ণনার বেসিক ব্যাপারগুলোতে কোনো ভুল করা যাবে না, অন্তত এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 করছি, এই লেখাটি পুরো মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকলে আপনার একটা ভালো পারসেপশন তৈরি হবে, বিশেষ করে যারা কোর্টে যাননি তাদের জন্য। আমি নিজে আইনজীবী। কিন্তু আইনজীবী মাত্রেই সর্বজ্ঞানী নয়। এর স্পেশালাইজেনও থাকে। সবার সব বিষয়ে দক্ষতা থাকেনা। আমারও সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি অগ্রিম।

একটু সময় নেবো। মাইন্ড করবেন না। ছোটবেলায় ‘ধৈর্য্য’ রচনা বাংলা অথবা ইংরেজি সাবজেক্টে লিখেছেন বোধহয় অনেকবার। এবার একটু তার ব্যবহারিক প্রয়োগ করুন।

শুরুতেই দেওয়ানি কার্যবিধি ও সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন সম্পর্কে আলোচনায় ঢুকবো। তবে যে মামলাটি নিয়ে আলাপ করবো, সেটা পরীক্ষায় আসার মতো কিছু না। অনুরোধ থাকবে – একটি মামলার আরজি এবং জবাব কেমন হয় সেটা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেবার জন্য এই মামলার এভরি ডিটেইল বিষয়বস্তু ভালোভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন।এটা একটি পারিবারিক মামলা। বিবাহ বিচ্ছেদের পরে সন্তানের খোরপোষ দাবিতে স্ত্রী কর্তৃক (প্রকৃতপক্ষে নাবালিকা সন্তান কর্তৃক) তালাকপ্রাপ্ত স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা।

প্রথমেই এই ফাইলটি ডাউনলোড করে পুরোটা পড়ুন : sampledrafting fot written exam । নিচে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী পড়ুন।

১. ড্রাফটিং বিষয়ে পড়ছেন – এটা বেমালুম ভুলে যান।

২. মামলার প্লিডিংসটাকে (আরজি ও জবাব) প্লিডিং আকারে না বিবেচনা করে মনে করুন যে, এখান থেকে পুরো কাহিনীটা বুঝে রাখবেন।

৩. এই পুরো কাহিনীটা বোঝার জন্য এই লিংক থেকে পিডিএফটি ডাউনলোড করুন।

৪. পুরো কাহিনী না বুঝে পরের স্টেপে যাবেন না দয়া করে।

যদি পড়ে থাকেন, তাহলে এবার কিছু বিষয় জেনে নেই।

একটি প্লিডিংস তথা আরজি ও জবাবে যা যা বিষয় থাকে এটাকে কয়েকটা অংশে ভাগ করা যেতে পারে। নিচে এর প্রধান ভাগগুলো ও উপভাগগুলো একবার পড়ে নেন জাস্ট।

1. The Heading and Title

1.1 আদালতের নাম

1.2 মামলার নম্বর

1.3 বাদী ও বিবাদীর পরিচয়

1.4 আরজি / জবাব পক্ষের নিবেদন / জবাব

2. The Body

2.1 মামলার বিষয়বস্তু ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা

2.2 মামলা উদ্ভবের কারণ ও দিন-তারিখ

2.3 সংশ্লিষ্ট আদালতের এখতিয়ার, তায়দাদ বর্ণনা ও কোর্ট ফি সম্পর্কে তথ্য

3. The Relief

3.1 প্রতিকার প্রার্থণা

4. The Footer

4.1 সাক্ষীর তফসিল / সম্পত্তির তফসিল

4.2 সত্যপাঠ / হলফনামা

4.3 বাদীর স্বাক্ষর

ওপরের এই প্রতিটি বিষয়ের সাথে এবার এই লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিয়ে পিডিএফ ফাইলটি দেখুন মনোযোগ দিয়ে  sample draft with annotation ।  আশা করি বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠবে।

যদি না বুঝে থাকেন তাহলে ফোন দেবেন ০১৭১২-৯০৮৫৬১ [এ্যাড. মুরাদ মোর্শেদ]।

এবার এর ভিন্ন ভিন্ন রকমফের বুঝবো বিশেষত যেগুলো নিয়ে তর্ক রয়েছে যে, ফরম্যাট টা কেমন হবে?

প্রথমেই আদালতের নাম লক্ষ্য করুন। এখানে বলা আছে –

‘জেলা রাজশাহীর বিজ্ঞ তানোর থানা পারিবারিক জজ আদালত’

অনেকে এটাতে শুরুতে ‘মোকাম’ শব্দটি লিখে থাকেন। সেটা লিখলেও ক্ষতি নেই।

তারপরেই মামলার নম্বরের ঘর। একটা চলতি প্রশ্ন সবার মাঝে ঘুরপাক খায়। নম্বর দিতে হবে নাকি হবে না? এটা একটা ভালো প্রশ্ন।

এটার জন্য এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান রাখা ও সেখান থেকে কমনসেন্স প্রয়োগ করতে হবে। একজন প্রতিকার প্রার্থী যখন আপনার কাছে আসে একটি মোকদ্দমা দায়ের করার জন্য, তখন আপনি তার বিষয়বস্তু ভালোভাবে বুঝে ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি আরজি লিখবেন। সেই আরজি যখন লেখা হবে তখন মামলার নম্বরের জায়গাটি ফাঁকা রেখে একটি অবলিগ চিহ্ন দিয়ে শুধু সালটি লিখে রাখবেন। আপনি যখন সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার আরজিটি জমা দেবেন, এটা কি বিচারকের কাছে সরাসরি তার খাস কামরায় দিতে হয় নাকি বিচারিক এজলাসে সরাসরি উপস্থাপন করতে হয়? এর কোনোটাই ঠিক নয়। এই আরজিটি সর্বপ্রথম আদালতের সংশ্লিষ্ট অফিসে সেরেস্তাদার এর নিকট জমা দিতে হয়। তিনি তখন পুরো আরজিটি একবার চেক করে নিয়ে প্রয়োজনীর সিল-স্বাক্ষর দিয়ে সেটা গ্রহণ করে আদালতের রেজিস্ট্রার খাতায় ক্রমিক নম্বর দিয়ে তুলে রাখেন মোকদ্দমার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় সহকারে। উক্ত রেজিস্ট্রার খাতায় যে সিরিয়ালে নম্বর বসানো হয় সেটিই মোকদ্দমার নম্বর বলে নির্ধারিত হয়। এটার মাধ্যমে একটি মামলাকে সহজে চেনা যায়। আইনজীবী, মক্কেল, মহুরী, বিচারক সবার জন্যই এই নম্বরের মাধ্যমে মোকদ্দমার নথিটি খুঁজে পাওয়া নিশ্চিত হয় ও পরবর্তী বিচারিক প্রক্রিয়া অগ্রসর করতে সহজ হয়। এ বিষয়ে দেওয়ানি কার্যবিধির ৪ নং আদেশটি ভালোভাবে পড়লে পরিষ্কার বোঝা যায়। নিচে আপনাদের উপলব্ধির সুবিধার্থে ৪ নং আদেশটি তুলে দিলাম আরেকটু আলোচনার পরে। সংশ্লিষ্ট অংশটি বোল্ড ও আন্ডারলাইন করা আছে।

তার মানেটা কি দাঁড়ালো? মানে দাঁড়ালো এটাই যে, আরজি ড্রাফটিং আসলে আপনারা মামলার নম্বর এর জায়গাটি ফাঁকা রাখবেন। লিখবেন এভাবে : মোকদ্দমা নং : …………… /২০১৭

কিন্তু যদি একটি জবাব লিখতে বলে পরীক্ষায়? অর্থাৎ জবাবের ড্রাফটিং আসে? তখন কিন্তু অবশ্যই নাম্বার বসবে। প্রশ্নে যদি উল্লেখ থাকে কোনো মামলার নম্বর, তাহলে সেই নম্বর বসাবেন। যদি উল্লেখ না থাকে, তাহলে আপনি আপনার সুবিধামতো একটি নাম্বার বসাবেন। লিখবেন এভাবে : মোকদ্দমা নং : ২৩৭/২০১৭।

উক্ত স্যাম্পল পিডিএফে খেয়াল করুন, আমি যখন মামলার আরজি জমা দেই, তখন মূল আরজির ফটোকপি করে রেখেছিলাম যেটা কিনা মামলার নম্বর বসানোর আগেই ফটোকপি করা ছিলো। ফলে আরজিটিতে মামলার নম্বরের জায়গাটি ফাঁকাই ছিলো। মামলার নম্বর বসানোর পরে আদালতের নির্দেশে সমন জারি হলো বিবাদীর প্রতি। তখন কিন্তু বিবাদী একটি নির্দিষ্ট নম্বর পাচ্ছেই উক্ত মামলার। ফলে বিবাদীর জবাবে দেখুন সরাসরি নম্বর বসিয়েই বিবাদী জবাব দিচ্ছেন। ক্লিয়ার হয়েছে আশা করি।

৪ নং আদেশটি এখানে তুলে দিলাম।

আদেশ ০৪ : মামলা দায়ের [Institution of Suit]

“১ : মামলা আরজি দাখিলের দ্বারা শুরু হবে : ১) আদালত বা তৎকর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নিযুক্ত কর্মকর্তার নিকট আরজি উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি মামলা দায়ের করতে হবে এবং আরজির সাথে যতজন বিবাদী থাকে, ততগুলি আরজির অবিকল নকল অনুরূপ সকল বিবাদীর উপর সমন জারীর জন্য দাখিল করতে হবে।

ক) মামলার ক্ষেত্রে সমন জারীর জন্য প্রদেয় কোর্ট ফি আরজি দাখিলের সময় এবং অন্যান্য কার্যক্রমের বেলায়, যখন পরোয়ানা ব্যবহার করা হয়, তখন পরিশোধ করতে হবে।

খ) প্রত্যেক বিবাদীর জন্য সমনের একটি নকলসহ বিবাদীদের পূর্ণ ও সঠিক ঠিকানাযুক্ত যথোচিত খামে আগাম প্রদত্ত প্রাপ্তি স্বীকার পত্র আরজির সঙ্গে বাদীকে দাখিল করতে হবে ।

২) ৬ষ্ঠ ও ৭ম আদেশে অন্তর্ভূক্ত বিধিমালা যতদূর প্রযোজ্য হয়, তদানুসারে প্রত্যেকটি আরজি প্রণয়ন করতে হবে।“

“২ : মামলার রেজিস্ট্র্রার : আদালত প্রত্যেক মামলার বিস্তৃত বিবরণ একটি রেজিস্ট্র্রারে রাখার উদ্দেশ্যে লিপিবদ্ধ করাবেন এবং উহা দেওয়ানী মামলার রেজিস্ট্র্রার (Register of Civil Suits) বলে অভিহিত হবে। প্রত্যেক বছর আদালতের আরজি গ্রহণের ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ বিষয়গুলির সংখ্যা দিতে হবে।

এবারে এর পরের বিষয়ে আসি। বাদী ও বিবাদীর পরিচয়। ভেরি সিম্পল এটা। কে প্রতিকার দাবী করছেন তার পরিচয়তো অবশ্যই লাগবে। কার বা কাদের বিরুদ্ধে প্রতিকারটি পাইতে চান সেটার উল্লেখও করতে হবে। এই উভয়েরই নাম, পিতা বা স্বামীরা নাম, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা আবশ্যিক।

তবে অন্য একটি কথা আছে। কোথাও আমার স্যাম্পল দেয়া আরজির মতো করে বাদীর নাম ঠিকানা বাম পার্শ্বে, ডান পার্শ্বে বিবাদীর নাম এবং মাঝখানে বনাম লেখা আছে। মানে বাদী ও বিবাদীর নাম সমান্তরালে দেয়া আছে। কিন্তু কিছু কিছু বইয়ে ড্রাফটিং দেখাতে গিয়ে ওপরে নিচে বা লম্বালম্বিভাবে বা ভার্টিক্যালি বাদী-বিবাদীর নাম লিখেছেন অনেক লেখক। মনে রাখবেন – এই দুটো পদ্ধতিই সঠিক। কোনো ভুল নেই। তবে হাইকোর্ট প্র্যাকটিসে সাধারণভাবে লম্বালম্বিভাবেই দেয়া হয়ে থাকে বাদী বিবাদীর ঠিকানা ও পরিচয়। ফলে পরেরটাই ফলো করতে পারেন।

বাদী বিবাদীর নাম পরিচয়ের পরপরই আসলে একটি প্লিডিংস এর মূল বডি শুরু হয়। তবে বডি শুরু করার আগে একটা গদ (গৎবাধা) বা প্রথাগত জিনিস লিখতে হয়। সেখানে কখনো মোকদ্দমার তায়দাদ লেখা থাকে অথবা বাদীর নিবেদনের উল্লেখ দিয়ে শুরু করতে হয়। যেমন – স্যাম্পল পিডিএফে খেয়াল করুন যে, ‘নাবালিকার খোরপোষ তায়দাদ বাবদ = ২৪,০০০/-’  লিখে বডির প্রথম লাইনেই বলা আছে ‘বাদী পক্ষে নিবেদন এই যে, …..’। আবার কোনো কোনো মামলায় মূল বডি শুরু হবার আগে সামান্য বড় ফন্টে বোল্ড করে লেখা থাকে এভাবে-

‘অত্র মামলার বাদী পক্ষের নিবেদন এই যে,

১. (মামলার বিবরণ)

২. (মামলার বিবরণ)…. এভাবে চলতে থাকে।

উপরের শেষোক্ত মতে ‘ ‘অত্র মামলার বাদী পক্ষের নিবেদন এই যে,’ – এই কথাটি শুরুতে লিখে নিয়ে পরেপরেই ১ম প্যারায় ১ নং ক্রমিক দিয়ে বাদীর মামলার বিস্তারিত বিবরণ লিখতে শুরু করতে হবে। অর্থাৎ মূল বডি লিখতে শুরু করলেন এখান থেকেই। 

মূল বডিতে যখন আপনি মূল মামলার বিষয়বস্তু বর্ণনা করছেন, তখন অবশ্যই উচিত হবে ক্রমিক নম্বর দিয়ে দিয়ে প্যারাগুলোকে সাজানো। এতে আদালত-আইনজীবী উভয় পক্ষের সুবিধা হয়। এটা জরুরি।

মূল বডিতে আমরা ৩ টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেবার কথা বলেছি। সেখানে প্রথমেই মূল ঘটনাটি বলে শেষ করে নিতে হবে এক বা একাধিক প্যারায়। তারপরেই চলমান ক্রমিকে মামলা উদ্ভবের কারণ ও দিন তারিখ সম্পর্কে তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। অথবা খুব সুনির্দিষ্ট করে দিন-তারিখ বলা না গেলেও কাছাকাছি বা আনুমানিক সময়টিরই উল্লেখ করতে হবে। [আলোচ্য স্যাম্পলটিতে ৪ নং ক্রমিকের প্যারাটি দেখে নিন এখুনি]

তারপরের ক্রমিকেই বলতে হবে – যে আদালতে মামলা দায়ের করা হচ্ছে সেই আদালতের এখতিয়ার আছে কি না এই মামলা শোনার, মামলার আর্থিক এখতিয়ারের সাথে প্রাসঙ্গিকভাবে সম্পর্কিত করে মামলার মূল্যমান উল্লেখ করতে হবে এবং যথাযথ কোর্ট ফি দেয়া হয়েছে কিনা এবং তা কত দেয়া হয়েছে সেটা উল্লেখ করতে হবে। [আলোচ্য স্যাম্পলটিতে ৫ নং ক্রমিকের প্যারাটি দেখে নিন এখুনি]

এবারে তার পরের অংশ। এটাকে আমরা ড্রাফটিং এর তৃতীয় অংশ ধরলেও এটা আগের ক্রমিকেই চলমান থাকবে এবং এটাই হবে এটার শেষ ক্রমিক নং। এখানে বাদী কি প্রতিকার চাইছে তার সুস্পষ্ট বিবরণ থাকবে। [আলোচ্য স্যাম্পলটিতে ৭ নং ক্রমিকটি ভালো করে দেখে নিন এখুনি]

তবে অবশ্যই ৭ নং ক্রমিকে দেয়া খ অংশের শেষ কয়েকটি শব্দ ‘বাদীর স্বপক্ষে বিবাদীর বিরুদ্ধে ডিক্রি দিতে,’ – এই শব্দ কয়টি লেখা আবশ্যক। এবং অতি অবশ্যই গ নং অংশটি হুবহু দিতে হবে। আরো যা যা প্রতিকার পাওয়া যায় একটি মামলায় তা উল্লেখ করে দিলে আদালত তার প্রতিকার দিতে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে। বাদীও সংশ্লিষ্ট কোনো ন্যায্য প্রতিকার চাইতে পারে ইক্যুইটি বলে।

এবারে তার পরের অংশ। আমরা বিষয়টির নামকরণ করেছি The Footer বলে। বিষয়টা ঠিক হলো কি না জানিনা। বুদ্ধির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে! :)।

যাই হোক, এটা আসলে একটি আরজির শেষ অংশ। এখানে – সাক্ষীর তফসিল / সম্পত্তির তফসিল, সত্যপাঠ / হলফনামা এবং বাদীর স্বাক্ষর থাকে। এর মধ্যে সত্যপাঠ আর হলফনামা নিয়ে বিশেষ তর্ক রয়েছে। আরজিতে কোনটা হবে, নাকি দুটোই হবে এ নিয়ে ফেসবুক গরম হয়ে ওঠে প্রায়ই।

আরজিতে সত্যপাঠ থাকে বা থাকবে। অন্য কিছু নয়। – এই কথাটা বললে এ বিষয়ে বলাই হয়ে যায়। আর কিছু লাগে না। কিন্তু ব্যাপারটা কি বুঝলেন? ‘সত্যপাঠ’ জিনিসটা কি?

এর কোনো সংজ্ঞা দেয়া নেই। ইংরেজিতে এটাকে verification বলে যার অর্থ – the process of establishing the truth, accuracy, or validity of something. অর্থাৎ কোনো বিষয়ের বৈধতা বা সত্যতা ঘোষণা করা।

এই সত্যতা ঘোষণা কে করবেন? কেন করবেন? একটি মামলার প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করলে সহজেই এর উত্তর পাওয়া যায়। কোনো প্রতিকারপ্রার্থী যখন কোনো প্রতিকার দাবিতে আদালতে আসেন, তিনি সরাসরি বিচারকের খাস কামরায় যান না, তিনি কোনো বিচারকের অফিসের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কাছেও যান না; তিনি যান একজন আইনজীবীর কাছে। সেই আইনজীবী উক্তর প্রতিকারপ্রার্থী বা মক্কেলের কথা শুনে-বুঝে একটি আরজি লেখেন মক্কেলের হয়ে। যেকোনো সাধারণ মানুষের আদালত সম্পর্কিত জ্ঞান সাধারণত থাকে না। সাধারণ প্রতিকারপ্রার্থী যদি আদালতে বিচারকের কাছে গিয়ে সরাসরি সব কথা বলতে থাকতেন তাহলে বিচারকাজ দীর্ঘতর ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়াদিতে ভরপুর হয়ে যেত। ফলে এসব বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিদের প্রয়োজন থেকেই আইনজীবী পেশার উদ্ভব। আইনজীবীরা মক্কেলের হয়ে আদালতে বিচারকের সামনে দাঁড়ান। আইনজীবীরা বিচারপ্রার্থী ও বিচারকের মাঝে সেতুবন্ধন করে থাকেন। কিন্তু একজন মক্কেলের হয়ে কি কি বিষয় উল্লেখ করে একটি আরজি লেখা হচ্ছে, কি কি প্রতিকার চাওয়া হচ্ছে – এসব যে ঠিকঠাকভাবে লিখিত হয়েছে সেটা মক্কেলের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া দরকার। ফলে, একজন বাদী বা বিবাদী আইনজীবীর লিখিত আরজিতে verify করবেন যে, উপরোক্ত মতে লিখিত আরজির সমস্ত বক্তব্য সঠিক এবং সত্য। বাদী এও বলবেন যে, তার স্বজ্ঞানেই এটা লিখিত হয়েছে ইত্যাদি। এই সত্যপাঠ বা verification নিচের গৎবাধা কথা অনুযায়ী লিখিত হয়ে থাকে সাধারণত।

“অত্র আরজির যাবতীয় বিবরণ সমূহ আমার জ্ঞান, বিশ্বাস ও অবগতি মতে সত্য ও সঠিক জানিয়া অত্র সত্যপাঠে আমি আমার নিজ নাম স্বাক্ষর করিলাম। ”

এই কথাটুকুর নিচেই বাদীর স্বাক্ষর থাকবে। এই স্বাক্ষর সম্পর্কে ৬ নং আদেশের ১৪ নং বিধিতে বলা আছে এবং সত্যপাঠ সম্পর্কে ৬ নং আদেশের ১৫ নং বিধিতে বলা আছে। নিচে এই দুইটি বিধি আপনাদের জন্য তুলে দিলাম। [বাংলা ও ইংরেজি উভয় অংশই তুলে দিলাম আপনাদের জন্য]

“১৪ : আরজি জবাব স্বাক্ষরিত হবে : প্রত্যেক আরজি জবাব পক্ষ এবং তার উকিল (যদি থাকে) কর্তৃক স্বাক্ষরিত হবে; তবে শর্ত থাকে যে, ক্ষেত্রে অনুপস্থিতি বা অন্য কোন উত্তম কারণে আরজি জবাবদানকারী পক্ষ আরজি জবাবে স্বাক্ষর করতে অসমর্থ হয়, সেক্ষেত্রে তার পক্ষে উহা স্বাক্ষর দানের বা মামলা দায়ের করার বা আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য তার দ্বারা যথাযথভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোন ব্যক্তি কর্তৃক উহা স্বাক্ষরিত হতে পারবে।

[Pleading to be signed

14. Every pleading shall be signed by the party and his pleader (if any): Provided that where a party pleading is, by reason of absence or for other good cause, unable to sign the pleading, it may be signed by any person duly authorized by him to sign the same or to sue or defend on his behalf.]

বিধি ১৫ এবার।

“১৫ : আরজি জবাব সত্যতা প্রতিপাদন : ১) বর্তমানে বলবৎ যে কোন আইনে অন্যরূপ যে বিধান আছে, তা ব্যতীত প্রত্যেক আরজি জবাবের নিম্নোক্ত পক্ষ বা আরজি জবাব দানকারী পক্ষদের মধ্যে একজন অথবা অপর কোন ব্যক্তি, যিনি মামলার ঘটনাবলীর সাথে পরিচিত বলে আদালতের সন্তুষ্টিতে প্রমাণিত, তৎকর্তৃক আরজি জবাবের সত্যতা প্রতিপাদন করতে হবে।

২) সত্যতা প্রতিপাদনকারী ব্যক্তি আরজি জবাবের দফার সংখ্যা উল্লেখপূর্বক নির্দিষ্ট করে বলবেন যে, কোনগুলির সত্যতা তিনি স্বজ্ঞানে প্রতিপাদন করছেন এবং কোনগুলির সত্যতা তিনি অপরের নিকট হতে প্রাপ্ত এবং তার বিশ্বাস মতে সত্য তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিপাদন করেছেন।

৩) যিনি সত্যতা প্রতিপাদন করবেন, তিনি উহাতে স্বাক্ষর দিবেন এবং যে তারিখে ও স্থানে উহা স্বাক্ষরিত হলো তা উল্লেখ করবেন।

[Verification of pleadings

15. (1) Save as otherwise provided by any law for the time being in force, every pleading shall be verified at the foot by the party or by one of the parties pleading or by some other person proved to the satisfaction of the Court to be acquainted with the facts of the case.

(2) The person verifying shall specify, by reference to the numbered paragraphs of the pleading, what he verifies of his own knowledge and what he verifies upon information received and believed to be true.

(3) The verification shall be signed by the person making it and shall state the date on which and the place at which it was signed.]

তো, প্লিডিংস সম্পর্কে বর্ণিত উক্ত ৬ নং আদেশে কোথাও বলা নাই যে, হলফনামা বা Affidavit জমা দিতে হবে। কিন্তু কোনো কোনো বইয়ে সম্ভবত বলা আছে  প্রতিটি আরজি বা জবাবে সত্যপাঠ ও হলফনামা [অথবা সত্যপাঠ বা হলফনামা] দিতে হবে। তাঁরা কোন বিবেচনায় একথা বলেছেন আমার জানা নেই। বিনয়ের সাথে বলছি যে, আমার জানার অভাবও থাকতে পারে।

আপাতত অন্তত একটা বিষয় নিশ্চিত থাকেন যে, যেকোনো আরজি ও জবাবে অবশ্যই সত্যপাঠ বা verification দিতে হবে। তাহলে, সত্যপাঠের গতানুগতিক লাইনটা মুখস্থ করে রাখুন। সত্যপাঠ কোথায় কোন পজিশনে আছে সেটা আবারো স্যাম্পল পিডিএফ ফাইল থেকে দেখে রাখুন। আরজিতেও আছে, জবাবেও আছে। ভালো করে দেখে নিন আরেকবার।

এবারে হলফনামা বা Affidavit বিষয়ে আসি। কোনো আদালতে বা যেকোনো আনুষ্ঠানিক জায়গায় সত্যাপাঠের চেয়ে হলফনামার গুরুত্ব নি:সন্দেহে বেশি। আগেই দেখলাম যে, আরজি ও জবাবে কোনো হলফনামা দেবার কথা বলা নেই। তবে হলফনামা বিষয়ে ৩ টি বিধি সম্বলিত একটি আদেশ রয়েছে দেওয়ানি কার্যবিধিতে -১৯ নং আদেশ। আদালত কোনো বিষয়ে হলফনামা দেবার আদেশ দিতে পারেন অথবা একটি হলফনামায় কি কি থাকবে সেসব নিয়ে এর ৩ টি বিধিতে বলা আছে।

থিওরিতে হলফনামা বিষয়ে আমাদের কুয়াশার জাল কাটার কথা নয়। আমরা এবার ব্যবহারিক অংশে একটু দেখি বিষয়টা। আমার নিজের অভিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবীকে [এ্যাডভোকেট আবুল হাসনাত বেগ] এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করাতে তিনি বললেন যে, সাধারণভাবে যেসব বিষয়ে সাক্ষী হবার সুযোগ নেই বা থাকেনা (শুনানীর সময় প্রতিপক্ষ যুক্তিতর্ক করতে পারে, কিন্তু কোনো সাক্ষীর কথা শোনার বিধান নাই ), অর্থাৎ একজন দরখাস্তকারীর কথার ওপরেই শুধুমাত্র আদালতকে বিশ্বাস করতে হয় -এমন সব ক্ষেত্রে এই হলফনামা দেবার প্রয়োজন পড়ে। হলফনামা দেবার অর্থই হলো – দরখাস্তকারী বা প্রতিকারপ্রার্থীর উত্থাপিত বিষয়টাতে কোনোরূপ মিথ্যা তথ্য নেই – এমন নিশ্চয়তা পাওয়া। যেমন ধরুন, কোনো নিষেধাজ্ঞার দরখাস্তে [আরজিতে নয়, এখানে দরখাস্তের কথা বলছি কিন্তু!] একজন প্রতিকারপ্রার্থী যেসব তথ্য ও যুক্তিমালা তুলে ধরে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেছেন, সেই বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে একটি হলফনামা সম্পাদন করে তা জুড়ে দিতে হয়। তাহলে হলফনামা দেবার কারণে আদালত অধিক নিশ্চয়তার সাথে আবেদনকারীর ওপর ভরসা করবেন। বিষয়টি এর চেয়ে বেশি পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। আমাদের আরো পরের আলোচনায় ব্যবহারিক উদাহরণ দেখা যাবে এ বিষয়ে। অপেক্ষা করুন। পড়তে থাকুন প্রবন্ধটি।

কোনো আরজি বা জবাবে সত্যপাঠ দিতে হবে; হলফনামা দেবার দরকার নেই। সাধারণভাবে কিছু বিশেষ বিশেষ দরখাস্তে হলফনামা দিতে হয়।

হলফনামা, সত্যপাঠ ইত্যাদি বিষয়ে আরেকটি বড় মামলা থেকে উদাহরণ দেবো। এবার আরেকটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। এটাও আমার নিজের ক্লায়েন্টের একটি মামলা।

মৃত মাজেদ আলী মৃত্যুকালে ১ স্ত্রী, ১ ছেলে ও ৪ জন মেয়ে রেখে মারা যান। একমাত্র ছেলেটি বাবার মৃত্যুর পরে পুরো পরিবারের ওপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। তারই অংশ হিসেবে একদিন তার মায়ের আলমারী থেকে মৃত পিতার সমস্ত দলিল ছিনিয়ে নিয়ে যায় জোরপূর্বক। এই ঘটনায় পারস্পরিক কানাকানি-গুঞ্জন করলেও কোনো পদক্ষেপ মা অথবা উক্ত ভাইয়ের বোনেরা নেয়নি।

পরবর্তীতে উক্ত মা একদিন তার নিজের নামে থাকা জমির খাজনা পরিশোধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে যায়। তখন তিনি জানতে পারেন যে, তার জমিটি আর তার নেই! সেই জমির খাজনা ইতিমধ্যে নাকি তার সন্তান পরিশোধ করেছে। মানে বুঝলেনতো? মানে মৃত বাবার সমস্ত জমির দলিলপত্রাদির সাথে মায়ের একমাত্র জমির দলিলটাও নিয়ে গেছে এবং জমিটি সে নিজের নামে লিখে নিয়েছে জীবিত থাকা মায়ের অজান্তেই। [এখানে অন্য একজন মহিলাকে মা সাজিয়ে নিয়ে গিয়ে সে জমিটি দানসূত্রে তার নামে লিখে নেয়]

মৃত বাবার জমির দলিলগুলো এখানে আলোচ্য বিষয় নয়। ভুইল্যা যান!

এই ঘটনা তিনি যেদিন জানতে পারলেন সেদিনই মামলার কারণ উদ্ভব হলো কিন্তু!

এরপরে তিনি তার মেয়েদেরকে ডেকে নিয়ে পরামর্শ করলেন – কি করা যায়? মেয়েরা পরামর্শ দিলো যে – ভাইয়ার সাথে আলাপ করেতো কোনো লাভ হয় না। ফলে মামলা করাই ভালো হবে। কিন্তু মায়ের মন বলে কথা! সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে?? তাকে অনেক বুঝিয়ে রাজী করানো হলো।

ক্লায়েন্টরা আমার কাছে আসলেন সপ্তাহ দুয়েক পরে। নানাবিধ বিবেচনায় এই বিষয়ে শেষ পর্যন্ত একটি মামলা দায়ের করা হলো। মামলাটি ঘোষণামূলক ডিক্রির মামলা ছিলো (সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায়)।

উক্ত মামলার আরজিটি ভালোভাবে পড়ুন। পুরো ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করুন এবারো। আরজির পিডিএফ ফাইলটি এখান থেকে ডাউনলোড দিন  suit 36_2015 plaint। [এখানে মামলায় ফাইনালি দাখিল করা আরজিটি নেই। তার ঠিক আগের বারের প্র“ফ কপিটাই খুঁজে পেলাম আমার ব্যক্তিগত কম্পিউটারে। সামান্য ভাষাগত সমস্যা থাকতে পারে ও দিন তারিখ উল্লেখের জায়গা ফাঁকা আছে। তবে মামলাটি বুঝতে বিন্দুমাত্রও সমস্যা হবে না। দেখুন!]

একটি আরজিতে কি কি থাকে এবং কিভাবে থাকে সে সম্পর্কে আবারো নিজেকে ঝালাই করে নিন এই ঘোষণামূলক ডিক্রির মামলার ফাইলটি দেখতে গিয়ে।

দেখলেন কি ভালো ভাবে?? দেখলেই ভালো।

এবারে এই ঘোষণামূলক মামলাটিকে ঘিরে মামলা দায়েরের কিছুকাল পরেই আমরা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনায় একটি দরখাস্ত দাখিল করি আদালতে এখানে সেই দরখাস্তটির পিডিএফ কপি দিলাম suit 36_2015 affidavit। এটাও ডাউনলোড করে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এই দরখাস্তের এফিডেভিট বা হলফনামা দিতে হয়েছিলো। এটাও মনোযোগের সাথে পড়লে আশা করি হলফনামার বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

একটা বিষয় এখানে লক্ষ্য করবেন যে, কোন আদেশ বা বিধি বা ধারা অনুযায়ী দরখাস্ত করা হচ্ছে সে বিষয়ে এখানে শিরোনামেই বলে দিতে হয়েছে। দরখাস্তে সবসময় সংশ্লিষ্ট ধারা বা আদেশ বা বিধি উল্লেখ করতে হয় যে,ক্ত আইনবলেই আপনি একটি নির্দিষ্ট প্রতিকার চান। অন্যদিকে সাধারণত কোনো আরজিতে কোনো আইনের ধারা, আদেশ বা বিধি উল্লেখের প্রয়োজন পড়ে না বা দেয়ার নিয়ম নেই। যেই সংশ্লিষ্ট ধারা বা আদেশে আপনি মামলার প্রতিকার চান সেই সংশ্লিষ্ট ধারার সাথে সম্পর্কিত করে মামলার আরজিটির বর্ণনা সাজাতে হয়। কোনো ধারা উল্লেখ করা যায় না।

এখানেই আমাদের আলোচনা শেষ করলাম। প্রয়োজনে বর্ধিত হবে। বাস্তবিকপক্ষে আরো অনেক আলোচনা করার আছে। কিন্তু পরীক্ষা সন্নিকটে। এটুকু থেকেই বেসিক ডিরেকশনটা নিয়ে এগোতে থাকেন। আলোচনা থাকলে আলোচনা চলবে। নিচের বাড়তি কথা শিরোনামে নির্দেশনা আছে সে বিষয়ে। ধন্যবাদ।


বাড়তি কথা

১. যেভাবে সত্যপাঠ এর বিষয়াদি ব্যাখ্যা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ধারা, বিধি ইত্যাদি উল্লেখপূর্বক, সেভাবে আদালতের নাম, বাদী বিবাদীর নাম ইত্যাদিও কোনটা কোন বিধিবলে বসবে সেটা উল্লেখ করা হয়নি পরিকল্পিতভাবেই – এটির পরিধি বিপুল বেড়ে যাবে বলে। তবে জানার আগ্রহ এবং সময় থাকলে জানাবেন, সেটাও যুক্ত করবো অন্য একটি আর্টিকেলে।

২. আমরা এখানে শুধুমাত্র সিভিল ড্রাফটিং এর বিষয় মূলত ব্যাখ্যা করেছি। এই বেসিক ব্যাপারটা জানলেই অন্যান্য বিষয় সেটা তামাদি অথবা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন হোক না কেন, সেগুলোও সলভ করে ফেলতে পারবেন।

৩. আমরা এটাকে একটা আলোচনার ফোরাম ধরনে রাখলাম। আপনাদের যখন যেটা প্রয়োজন, সেটা জানালে আমরা তৎক্ষণাৎ সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো এবং প্রয়োজনে কোনো মুসাবিদা লিখেও দেবো। আপনারা আপনাদের প্রয়োজনটি নিচে কমেন্ট বক্সে পরিষ্কার ভাষায় লিখবেন।

৪. স্পেসিফিক প্রয়োজনে আমাদেরকে ফোন দিতে পারেন।

৫. ধন্যবাদ।