ধারা ও ধারার বিষয়বস্তু কিভাবে আয়ত্ত করবেন? [How to grab the Sections of Law for Bar Council MCQ Exam]
সম্পাদকের কথা : এই নিবন্ধটি আগামী বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষার্থীদের জন্য লিখেছেন আপনাদের অনেকেরই প্রিয় মুখ জনাব রাম চন্দ্র দাশ। তিনি শিক্ষানবীশ আইনজীবী ফোরামের সম্মানিত আহ্বায়ক। জ্যুসি ল এখানে শুধুমাত্র এই লেখাটি প্রকাশের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। বলা বাহুল্য, বার কাউন্সিল পরীক্ষা ঘিরে কিছু সার্ভিস জ্যুসি ল দিয়ে থাকলেও অনেক ধরনের জরুরি নিবন্ধ যা কিনা শিক্ষার্থীদের গাইডলাইন হিসেবে কাজে লাগে বা শিক্ষার্থীদের সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট করে তুলতে সহায়তা করে, সেই নিবন্ধগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়। তারই অংশ হিসেবে জনাব রাম চন্দ্র দাশের এই লেখাটি প্রকাশ করা হলো। লেখাটির কপিরাইট উনারই। কোনো প্রয়োজনে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই ইমেইলে : ram.chandra.das@gmail.com।
লেখককে ধন্যবাদ পরীক্ষার্থীবান্ধব এই ধরনের চমৎকার নিবন্ধ লেখার কষ্টসাধ্য কাজটি করার জন্য।
এ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ, সিইও , জ্যুসি ল।
আইনের শিক্ষার্থী, শিক্ষানবীশ আইনজীবী ও নতুন আইনজীবীদের জন্য ‘ধারা’ আয়ত্ত করা একটি চ্যালেঞ্জ। এ সম্পর্কে সবচেয়ে বহুল প্রকাশিত বাক্য ‘ধারা মনে থাকে না’! এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে আমাদের প্রাণপণ চেষ্টা করতে হয়, কারণ আইনের সাধারণ পরীক্ষায়, পেশাগত জীবনে বিশেষ করে ইদানিং বার কাউন্সিল পরীক্ষায় এটি বেশ গুরুত্বের সাথে সামনে আসছে। যদিও আইনজীবী হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন চর্চার এক পর্যায়ে এটি সহজাতভাবে আয়ত্তে চলে আসে এবং প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে আইন দেখার সুযোগ থাকে।
যেহেতু প্রায় সব আইনই ধারা-ভিত্তিক বা কোডিফাইড (codified), তাই এটা কোনো না কোনোভাবে আমাদের আয়ত্ত করতেই হয়। অন্যদিকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মুখস্থ করার ক্ষমতাও কিছুটা কমতে থাকে, যেখানে বয়স্কদের সংগ্রামটা একটু বেশি করতে হয়। আবার বয়স্কদের অন্যান্য অভিজ্ঞতা বেশি থাকে বলে, ধারা বাগে আনতে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ থাকে। সুতরাং ভয়ের কিছু নেই; ভয়কে আমাদের জয় করতেই হবে।
প্রথমেই খেয়াল করতে হবে ‘আয়ত্ত’ (ইংরেজিতে acquire, যার মানে to gain something by your own effort) শব্দটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে; ‘মুখস্থ’ নয়! আয়ত্ত করার মধ্যে কোনকিছুর গভীরে গিয়ে বোঝাপড়ার একটি সম্পর্ক আছে, অন্যদিকে মুখস্থ করার মধ্যে বোঝাপড়ার সম্পর্কটি খুবই কম, বরং যান্ত্রিকভাবে কাজটি (স্মৃতিতে ধরে রাখা) করে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি প্রধান। মুখস্থ অনেকটা যান্ত্রিক প্রক্রিয়া হওয়ার কারণে একটা সময় পরে এটি ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বিশেষ করে না বুঝে মুখস্থ করলে এবং এর চর্চা না থাকলে। মনে রাখতে হবে যেকোনো কিছু শেখা একটি ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া। তাই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া ও প্রচেষ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকেই নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার দিকে ফিরে তাকান, দেখবেন আপনি অনেক কঠিন ও অপছন্দের বিষয় বা পরিস্থিতি রপ্ত করেছেন বা মোকাবেলা করেছেন। এই রপ্ত বা মোকাবেলা করাটা হয়েছে একটি সময়ের বা পরিস্থিতির প্রয়োজনে।
একটি উদাহরণে যাই। ধরুন, কোনো সাধারণ জ্ঞানের বইয়ে একটি প্রশ্ন দেয়া আছে – সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উচু অবস্থানে কোন রাজধানী অবস্থিত? ধরা যাক এর সঠিক উত্তর হলো – দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর রাজধানী লিমা। এখন এই উত্তরের তথ্যটি আপনি কিভাবে মনে রাখতে পারবেন? আপনি যদি এটি মুখস্থ রাখতে যান, তখন পারবেন হয়তো, কিন্তু এরকম অসংখ্য বিচিত্র তথ্য মুখস্থ করে মনে রাখা কঠিন হবে, এমনকি অসম্ভব! উত্তরের এই তথ্যটি তিনিই সবচে ভালো মনে রাখতে পারবেন যিনি পৃথিবীর মানচিত্র, দক্ষিণ আমেরিকা কোথায়, সেখানকার অন্যান্য দেশগুলোর [যেমন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা] অবস্থান কোথায়, পেরু কোন দেশটি, সেটির রাজধানী মানচিত্রে কোথায় ইত্যাদি জানেন। এর সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠ কি, সমুদ্রপৃষ্ঠ ধরে কেন ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা মাপা হয়, পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ গঠনের ইতিহাস ইত্যাদি বিষয় যদি জানা থাকে তাহলে আরো সোনায় সোহাগা। এই তথ্যগুলো যার ভালো জানা আছে, তিনিই সহজেই মনে রাখতে পারবেন যে, পেরুর রাজধানী লিমাই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচে উঁচুতে অবস্থিত রাজধানী। অর্থাৎ, কোনো স্পেসিফিক একটি নির্দিষ্ট তথ্য [part] জানার জন্য একজনকে পুরো সমগ্র [whole] সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়, ঠিক তেমনিভাবে পুরো সমগ্রটা [whole] সম্পর্কে ধারণা রাখার জন্য অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তথ্য বা অংশ [part] জানতে হয়। এর মাধ্যমেই একজন কোনো তথ্য সহজে মনে রাখতে বা ধারণ করতে পারেন। আর যার উক্ত আনুষঙ্গিক তথ্য বা সাধারণ তথ্য বা জ্ঞান জানা নাই, তিনি বিষয়টি মুখস্থ করবেন, কিন্তু বিষয়টি তার স্মৃতিতে উপযুক্ত তথ্য সহকারে লোকেট করাতে পারবেন না, ফলে যেকোনো সময় ভুলে যেতে পারেন।
মানচিত্র বোঝাবুঝির আরেকটা উদাহরণ দিয়ে আইনের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ বোঝার চেষ্টা করবো। যেমন, কেউ আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর নাম ও তার অন্যান্য তথ্যাদি আয়ত্ত করতে চায়। যেহেতু এটি আমাদের অপরিচিত, তাই এটা আয়ত্ত করতে হলে বেশ কিছু টেকনিক বা পদ্ধতি (যথাসম্ভব বৈজ্ঞানিক এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক) অবলম্বন না করতে পারলে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষত্রে আমরা কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি?
১) আফ্রিকা মহাদেশের মানচিত্রটি দেখতে পারি। কারণ যেকোনো জিনিস ভিজ্যুয়ালি দেখলে মনে থাকে বেশি এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। অর্থাৎ মানব ব্রেইন ‘লিপি’র চেয়ে ‘ছবি’ বেশি মনে রাখতে পারে। অন্যদিকে, পুরো জিনিসটা (মহাদেশ) দেখলে, এর অংশ অর্থাৎ দেশগুলো মনে রাখা সহজতর হবে; সহজ কথায় বললে, ‘সমগ্রে’র সাথে ‘অংশে’র সম্পর্ক (relationship between ‘parts’ and ‘whole’)
২) বর্ণানুক্রমিক বা দিক (পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ) এবং সংখ্যা অনুযায়ী দেশের নামের একটি ধারাবাহিকতা তৈরি করতে পারি। কোনো একটি নির্ধারকের ভিত্তিতে ধারাবাহিকতা মনে রাখা সহজ। ধারাবাহিকতার উপস্থিতি আমরা গল্পে’র মধ্যে বেশি পাই, তাই গল্প মনে রাখতে সহজ হয়। আবার সংখ্যার ধারাবহিকতা মনে রাখতে জোড়-বিজোড়, সংখ্যার শেষে ৫ বা ০ আছে এমন নম্বরকে ধরে মনে রাখা যেতে পারে।
৩) তারপর দেশগুলোর তথ্যাদি টেবিলে সাজাতে পারি। টেবিল সাজালে একনজরে দেখা যায়, এটি একধরণের মানচিত্রের কাজ করে। ‘সমগ্রে’র সাথে ‘অংশে’র সম্পর্ক, সাযুজ্যতা বা তুলনা করতে সুবিধা হয়।
৪) কঠিন/ অপরিচিত বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে পারি। কিছু নাম বা কিছু তথ্য, বা ধারণা অপরিচিত বা কঠিন; এগুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত করে চর্চা করতে হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা মনে রাখার পদ্ধতি কাজে লাগানো যেতে পারে। আলাদাভাবে লিখে রাখা বেশ কাজের। স্কুলজীবনে বীজগণিতের সূত্র মনে রাখার জন্য চার্ট আকারে লিখে দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখার কথা আমাদের মনে থাকতে পারে।
৫) একটি দেশের সাথে আরেকটির সম্পর্ক (মিল) স্থাপন করতে পারি। দুই বা ততোধিক জিনিসের মধ্যে মিল খুঁজে বের করার মাধ্যমেও মনে রাখা সহজতর হয়।
৬) তুলনামূলক চিত্র তৈরি করতে পারি। আবার মিল নাই কিন্তু পার্থক্য আছে এমন বিষয়ও মনে রাখতে সাহায্য করে।
৭) সর্বোপরি, কিছুদিন পরপর এগুলো দেখতে পারি। মনে রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট বিরতিতে বিষয়টি পড়া, লেখা বা চর্চা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রসায়নবিদ্যা পড়ার ক্ষেত্রে একটি কথার প্রচলন ছিল, আমরা সবাই শুনেছি- ‘যতোই পড়িবে, ততোই ভুলিবে/ যতোই ভুলিবে, ততোই পড়িবে/ যতোই পড়িবে ততোই শিখিবে’। অর্থাৎ short-term memory থেকে long-term memory নেওয়ার জন্য আমাদেরকে নির্দিষ্ট বিরতিতে জিনিসগুলো বার বার পড়তে হবে।
আপনারা হয়তো ইতিমধ্যেই উপরের উদাহরণের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাটি থেকে কিভাবে ‘আইন শিখতে’ অর্থাৎ ধারা ও ধারার বিষয়বস্তু আয়ত্ত করার প্রক্রিয়াতে কাজে লাগাবেন তা ধরে ফেলেছেন। অন্যদিকে এই উদাহরণ থেকে আরেকটি জিনিস মনে হয় অনুধাবন করছেন সেটা হলো ধারা ও ধারার বিষয়বস্তু একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। মনে রাখতে হলে দুটি মিলেই মনে রাখার দরকার – দুটিই পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এরসাথে যুক্ত হয় ‘অধ্যায়’! ২০১৭ সালের এমসিকিউতে একটি প্রশ্ন এসেছে ‘সাধারণ ব্যতিক্রম’ দণ্ডবিধির কোন অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত? কাজেই সিলেবাস অনুযায়ী সার্বিকভাবে ৭টি আইন ও তার ধারাগুলো সম্পর্কে পড়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
আবার অনেকের কাছে মনে হবে এতকিছু করাতো কঠিন; কিছুটা কঠিনতো বটেই। বিষয়টি অস্বীকার করার জো নেই যে, বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষা পাশ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং (পাসের হার ৩০-৩৫%)! কাজেই তেমন কোনো শর্টকাট মেথডও নাই; থাকলেও মনে না থাকার ঝুঁকি অনেক বেশি। কাজেই আমি মনে করি ঝুঁকি কমানোর জন্য সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে পরিশ্রম করলে এই প্রস্তুতি লিখিত এবং পরবর্তীতে পেশাগত জীবনেও কাজে দেবে।
আপনাদের সুবিধার্থে একটি আইনের আলোকে (সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২) আলোচনা করলে প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে অর্থাৎ ‘জলবৎ তরলং’ বা পানির মতো তরল (সহজ) হয়ে যাবে!
প্রথমত, সূচিপত্র বা আইনের মানচিত্র বিশ্লেষণ : সাক্ষ্য আইন পড়ার শুরুতেই আমরা এর ধারাভিত্তিক সূচিপত্রটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করবো ও গভীর মনোযোগ সহকারে দেখে নিবো; সাথে বোঝার চেষ্টা করবো এই আইনের উদ্দেশ্য কি? সম্ভব হলে এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। এগুলো জানলেই সাক্ষ্য আইনের একটি মানচিত্র চোখের সামনে ভেসে উঠতে পারে। এই সূচিপত্র বিশ্লেষণ করেই আমরা এই আইনটি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা নিতে পারি। তারপর সিলেবাস অনুযায়ী অধ্যায় ও উপ-অধ্যায় বাছাই করে কোন ধারাগুলো গুরুত্বপূর্ণ তাও বিবেচনায় নিতে পারি। প্রতিটি ধারারই আবার একটি ‘শিরোনাম’ আছে, কোনো কোনো ধারার আবার উপ-শিরোনামও আছে।
- সাক্ষ্য আইনে মোট ৩টি অংশ আছে, প্রতিটি অংশের অধীনে এক বা একাধিক অধ্যায় আছে;
- এই তিনটি অংশের অধীনে ১১টি অধ্যায়; কিছু কিছু অধ্যায় আবার বিভিন্ন উপ-অধ্যায়ে বিভক্ত;
- ১১টি অধ্যায়ের প্রতিটিতে এক বা একাধিক ধারার সমন্বয়ে ১৬৭টি ধারা আছে।
এই বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে আপনি একটি ধারাবাহিকতা অবলোকন করতে পারবেন। সার্বিক ধারণার পাশাপাশি এই ধারার ধারাবাহিকতাটি ধরতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যার মাধ্যমে আয়ত্ত করার প্রক্রিয়াটি শুরু করলেন।
দ্বিতীয়ত, সিলেবাস অনুযায়ী অধ্যায় ও উপ-অধ্যায় পর্যালোচনা : এর পরই আপনি একটি অধ্যায়ে চলে যাবেন। যেমন, সাক্ষ্য আইনের ২য় অধ্যায়ে অনেকগুলো উপ-অধ্যায় বা বিষয় আছে-
(১) ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা (ধারা ৫-১৬)
(২) স্বীকার (ধারা ১৭-৩১). এই উপ-অধ্যায় বা বিষয়েই স্বীকার (ধারা ১৭-২৩ ও ধারা ৩১) ও স্বীকারোক্তি (ধারা ২৪-৩০) আলাদা আলাদা ২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
(৩) এমন মানুষের বিবৃতি যাদের সাক্ষী হিসাবে ডাকা যায় না (ধারা ৩২-৩৩)
(৪) বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রদত্ত বিবৃতি (ধারা ৩৪-৩৮)
(৫) বিবৃতির কতটুকু প্রমাণ করতে হবে (ধারা ৩৯)
(৬) আদালতের বিচারের রায় কখন প্রাসঙ্গিক হবে (ধারা ৪০-৪৪)
(৭) তৃতীয় ব্যক্তির মতামত কখন প্রাসঙ্গিক হবে (ধারা ৪৫-৫১)
(৮) চরিত্র কখন প্রাসঙ্গিক হবে (ধারা ৫২-৫৫)
উপরের ৮টি উপ-অধ্যায় বা বিষয়ের মধ্যে প্রথম ৪টি (আন্ডার-লাইন করা) বিষয় সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত। তাই বাকী বিষয়গুলো চোখ বুলিয়ে গেলেও চলবে। কিন্তু সিলেবাসে উল্লেখিত বিষয়গুলো যত্নের সাথে দেখতে হবে।
তৃতীয়ত, উপ-বিষয়ের ধারা বিশ্লেষণ : ধরুন, আপনি স্বীকার (ধারা ১৭-২৩ ও ধারা ৩১) বিষয়টি আয়ত্ত করতে চান অর্থাৎ স্বীকার সংক্রান্ত ৮টি ধারা ও এদের বিষয়বস্তু। এখন আপনাকে ধারা অনুযায়ী বিষয়বস্তু বুঝে নিতে হবে এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো মনে রাখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ধারা, যেমন
ধারা ১৭ : স্বীকারের সংজ্ঞা
ধারা ১৮ : কে কে স্বীকৃতি দিতে পারবেন
…… এভাবে
ধারা ৩১ : স্বীকৃতি চুড়ান্ত প্রমাণ নয়, তবে তা ‘স্বীকৃতির বাধা’ (estoppel) হিসেবে কাজ করবে; অর্থাৎ স্বীকৃতি একবার প্রদান করে ফেললে এটা আর অস্বীকার করা যাবে না।
কাজেই কোন ধারাগুলো মনে রাখতে হবে, এগুলো বাছাই করে আলাদাভাবে নোট করা যেতে পারে। পরীক্ষায় ধারা উল্লেখ করে বিষয়বস্তু কী জানতে চাইতে পারে আবার বিষয়বস্তুটি কোন ধারায় আছে সেটাও জানতে চাইতে পারে (যেমন স্বীকারের সংজ্ঞা কোন ধারার বিষয়বস্তু? ধারা ১৭-২০ ধারা পর্যন্ত)।
চতুর্থত, ধারার বিষয়বস্তু ও প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি বিশ্লেষণ : যেমন – ধারা ১৭: স্বীকারের সংজ্ঞা তে কী কী আছে?
১৭ ধারাটি এরকম –
”স্বীকার এক প্রকার মৌখিক বা দালিলিক/ লিখিত বিবৃতি, যা বিচার্য বিষয় (fact in issue) বা প্রাসঙ্গিক ঘটনা (relevant fact) সম্পর্কে অনুমানের সুযোগ বা সূচনা করে দেয়, এবং এটি পরবর্তী ধারায় (অর্থাৎ ১৮-২০) উল্লেখিত নির্দিষ্ট অবস্থার প্রেক্ষিতে কিছু ব্যক্তি প্রদান করে।”
এই ধারাটিতে আমরা নিচের তিনটি বিষয় দেখতে পাই-
১) স্বীকার এক প্রকার বিবৃতি; মৌখিক বা দালিলিক/ লিখিত,
২) যা বিচার্য বিষয় (fact in issue) বা প্রাসঙ্গিক ঘটনা (relevant fact) সম্পর্কে অনুমানের সুযোগ বা সূচনা করে দেয়,
৩) এবং এটি পরবর্তী ধারায় (অর্থাৎ ১৮-২০) উল্লেখিত নির্দিষ্ট অবস্থার প্রেক্ষিতে কিছু ব্যক্তি প্রদান করে;
১৭ ধারায় স্বীকারের সংজ্ঞায় প্রধান বিষয়বস্তু প্রথম ২ টি। কিন্তু ৩ নং বিষয়টি বুঝতে ১৮-২০ ধারা পড়তে হবে। আবার বিচার্য বিষয় (fact in issue) বা প্রাসঙ্গিক ঘটনা (relevant fact) বুঝতে ধারা ২ এ উল্লেখিত সংজ্ঞা পড়ে নিতে হবে।
ধারা অনুধাবন করতে উদাহরণ (illustration) খুব সাহায্য করে; আবার উদাহরণ থেকে সমস্যা-ভিত্তিক এমসিকিউ বা লিখিত প্রশ্নও আসে অনেক সময়। যেমন – ২০ ধারা : মামলার পক্ষ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখিত ব্যক্তির স্বীকার- এর উদাহরণ :
“প্রশ্ন যখন এ কর্তৃক বি এর কাছে ঘোড়া বিক্রি করেছে কি না? এ বি – কে বলল, সি এর কাছে যাও, সি সব জানে। এক্ষেত্রে সি এর বিবৃতি ‘স্বীকার’ বলে গণ্য হবে”
এখানে সি তৃতীয় পক্ষ। মোকদ্দমার পক্ষ বিবাদী এ বললো যে, সি বিষয়টি জানে। কাজেই সি-এর বিবৃতি স্বীকার বলে গণ্য হবে।
পঞ্চমত, একেকটি অধ্যায় বা উপ-অধ্যায়ের ধারাগুলোর সমাবেশকরণ : টেবিলে বা ছকে সাজানো, মিল, অমিল ও বিশেষ দিক খুঁজে বের করা, খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো চার্ট আকারে টাঙিয়ে রাখা ইত্যাদি আপনার সুবিধামতো আপনি করতেই পারেন।
আপনি নিশ্চয়ই হাপিয়ে উঠেছেন – এই দীর্ঘ আলোচনা পড়ে। এক্ষেত্রেও ধৈর্য্য সহকারে আপনার নিজের মতো করে পদ্ধতি অবলম্বন করুন। কারণ একটি আইনকে ভালোভাবে পাঠ করে একবার শিখে গেলে, এটা আপনার সারাজীবন কাজে লাগবে। মনে রাখতে হবে, একবার বড়শি দিয়ে মাছ ধরা শিখে গেলে, অনেক মাছ ধরতে পারবেন আপনার খুশিমতো।
এটুকুই আপাতত। জানিনা কতটুকু বোধগম্য হলো, আর কতটুকুই বা আপনারা মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলেন। ভবিষ্যতে এই নিবন্ধটিকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করবো আপনাদের সুচিন্তিত মতামত পেলে।
– লেখক : রাম চন্দ্র দাশ
উপরোক্ত লেখাটির সাথে এই লিংকে থাকা লেখাটি পড়তে পারেন। এটি বার কাউন্সিল পরীক্ষার্থীরা বিগত তিন বছরে অন্তত 25,000 বারের বেশি পড়েছেন। এই নিবন্ধটি আমাদের প্রকাশিত বার কাউন্সিল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিমূলক বই ‘একটি চিরুনি অভিযান [MCQ পর্ব]’ বইয়ের 15-25 পৃষ্ঠায় যুক্ত করা আছে।
অনেক ভাল লাগল আপনার গাইডলাইনটি।
অসাধারণ লেখা । ধন্যবাদ
অসাধারণ একটা গাইডলাইন। অনেক ধন্যবাদ ☺