How to read Penal Code [Part - 3]
‘দণ্ডবিধি কীভাবে পড়তে হবে’ – সে বিষয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে দণ্ডবিধির তৃতীয় অংশ তথা ২৯৮-৩৭৭ পর্যন্ত একটি সারসংক্ষেপ এই লেখায় রয়েছে। দণ্ডবিধির এই তৃতীয় অংশটি পড়ার শুরুতে এবং শেষে আরেকবার পড়ে নিলে এই নিবন্ধটি আপনার বিশেষ কাজে দেবে আশা করি।
সাক্ষ্য আইন [ধারা ১০১-১৬৭]
[বিশেষ জ্ঞাতব্য : এই কনটেন্টটি মূলত ‘আইনের ধারাপাত’ নামক বইটির 115-117 পৃষ্ঠা থেকে নেওয়া হয়েছে। আইনের ধারাপাত বইটি কুরিয়ারে সংগ্রহ করতে ফোন দিন : 01712-908561]
[এই অংশের ওপর আগামী 1 ডিসেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যারা ফ্রি একাউন্ট খুলেছেন তারা কীভাবে পরীক্ষা দিতে হবে বা একাউন্ট ব্যবহার করতে হবে – তা যদি বুঝতে না পারেন তবে এই ভিডিওটি দেখে রাখতে পারেন : https://youtu.be/NeFQgtxJbZs]
এবারে সাক্ষ্য আইনের তৃতীয় খণ্ড যার বিস্তৃতি ১০১ থেকে ১৬৭ ধারা পর্যন্ত। এই তৃতীয় খণ্ডের মূল শিরোনাম ‘সাক্ষ্য উপস্থান ও তার ফল’। এই খণ্ডের ভেতরে অধ্যায় ৭ থেকে ১১ অধ্যায় পর্যন্ত প্রমাণের দায়িত্ব, স্বীকৃতির বাধা, সাক্ষী, সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ এবং অন্যায়ভাবে সাক্ষ্য গ্রাহ্য ও অগ্রাহ্য করা উপশিরোনামে আলোচনা করা আছে। এই খণ্ড থেকে অনেক প্রশ্ন আসে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায়। অনেক প্রশ্ন আসলেও এর ধারণাগুলো বেশিরভাগই খুব সহজে আয়ত্ব করা যায়।
‘প্রমাণের দায়িত্ব’ শিরোনামে ১০১ থেকে ১১৪ ধারা পর্যন্ত আলোচনা আছে। এর প্রতিটি ধারাতে একটিই মূল কথা – যিনি কোনো কিছু দাবি করবেন কোনো মামলায়, সেটি তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে, তার দাবিটি সঠিক। মূল বই থেকে আবারো প্রাসঙ্গিক আলোচনা এখানে তুলে দিলাম।
“… প্রমাণের দায় বা প্রমাণের ভার সম্পর্কে একটি সাধারণ কথা মনে রাখবেন যে, যিনি কোনো কিছু দাবি করেন বা যিনি কোনো দাবির পক্ষে রায় পাবার জন্য আদালতে আসেন তাকেই প্রমাণ করতে হয় তার বিষয়বস্তুটি। মানে যিনি দাবি করেন কোনো কিছুর, প্রমাণের ভার সবসময় তার ওপরেই বর্তায়। উদাহরণ দেখি।
ধরুন, আপনি বন্ধুর কাছে ১০,০০০/- টাকা ধার করেছেন। সেই টাকা আপনি পরিশোধ করছেন না। তখন আপনার বন্ধুটি আদালতে মামলা করলে তাকেই প্রমাণ করে দেখাতে হবে যে, আসলেই আপনি তার কাছ থেকে উক্ত টাকা ধার হিসেবে নিয়েছিলেন। এর জন্য তাকে উক্ত টাকার লেনদেনের সময়কার কোনো চুক্তি বা ব্যাংকের চেক অথবা অন্য কোনো উপায়ে তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে আপনি তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। আপনাকে এটা প্রমাণ করতে হবে না যে, আপনি তার কাছ থেকে টাকা নেন নি। আপনার ওপর কোনো প্রমাণের ভার বা প্রমাণের দায় নেই। তবে, ধরা যাক, আপনি স্বীকার করে নিলেন যে, আপনি টাকাটা নিয়েছেন, কিন্তু সেই টাকাটা আপনারই প্রাপ্য ছিলো, সেটা কোনো ধার বা কর্জ ছিলো না; সেটা ছিলো অতীতের কোনো পাওনা টাকা, যা আপনাকে আপনার বন্ধু পরিশোধ করেছে মাত্র! এবার আপনার পালা। কেননা, এবার আপনি দাবি করলেন, তা ছিলো কোনো টাকা পরিশোধের ঘটনা মাত্র যা কিনা আপনারই পাওনা ছিলো! তার মানে, যিনি যা দাবি করবেন তাকেই তা প্রমাণ করতে হবে। এটাই সকল ক্ষেত্রে প্রমাণের দায়ভার এর নীতি। এর বাইরে কোনো কথা নেই।
সাধারণভাবে দেওয়ানি মামলায় বাদী পক্ষের ওপর প্রমাণের ভার থাকে আর ফৌজদারি মামলায় অভিযোগকারী বা বাদী পক্ষের বা রাষ্ট্র পক্ষের ওপর প্রমাণের ভার থাকে। তবে ঘটনাচক্রে বিবাদী বা আসামির ওপরও প্রমাণের ভার স্থানান্তর হতে পারে, যদি কোনো দাবি তার থাকে!
একটু অতীতে যাই। আপনারা দণ্ডবিধির ব্যতিক্রম পড়ে এসেছিলেন। যেমন, একটি শিশু যদি ৯ বছরের কম বয়স হয় এবং তার সুবাদে সে দাবি করে যে, তার বয়স ৯ বছরের কম এবং এই কারণে বা হেতুতে সে মামলার বর্ণিত অভিযোগে সে অভিযুক্ত হতে পারে না; সেক্ষেত্রে তাকেই প্রমাণ করতে হবে তার বয়স ৯ বছরের কম [দণ্ডবিধির ৮২ ধারা]। আবার তার বয়স ৯ বছরের বেশি এবং ১২ বছরের কম, কিন্তু অভিযুক্ত বিষয়ে তার বয়সের যথার্থ পরিপক্কতা অর্জন হয়নি বিধায় সে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে পারে, এক্ষেত্রেও তাকেই সেটা প্রমাণ করতে হবে। ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার প্রসঙ্গেও আসামি এভাবে তার দাবি তুলতে গেলে প্রমাণের দায়ভার আসামির ওপর পড়ে।” [পৃষ্ঠা ৪৫৮, একটি চিরুনি অভিযান – এমসিকিউ পর্ব]
উপরের শেষ লাইনটি সাক্ষ্য আইনের ১০৫ ধারার সাথে সম্পর্কিত। ১০১ থেকে ১১৪ ধারা পর্যন্ত প্রতিটি ধারাতেই তার মানে মূল সুর হচ্ছে, যিনি দাবি করেন তাকেই মামলায় তার বিষয়বস্তু প্রমাণ করতে হবে।
এর পরেই ৮ম অধ্যায়ে তিনটি ধারায় ১১৫ থেকে ১১৭ ধারায় এস্টোপেল নামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে। এখান থেকে বার কাউন্সিলে লিখিত পরীক্ষাতেও প্রশ্ন আসে। এই ধারণাটি আইনের অত্যন্ত বেসিক একটি ধারণা। এটি ভালো করে পড়বেন, বিশেষত ধারার বিষয়বস্তু ধরে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতে পারে।
এর পরে ৯ম অধ্যায়ে ‘সাক্ষী’ শিরোনামে ১১৮ থেকে ১৩৪ ধারা পর্যন্ত আলোচনায় কে কে সাক্ষী হতে পারেন, কোনো বিশেষ শর্ত আছে কীনা, বোবা সাক্ষী, সাক্ষীর সহযোগী, সাক্ষীর সংখ্যা ইত্যাদি বিষয়গুলো এখানে বর্ণিত আছে। এই অংশটিও বেশ সহজ আছে।
এর পরে ১০ অধ্যায়ে ‘সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ’ শিরোনামে আলোচনা ১৩৫ থেকে ১৬৬ ধারা পর্যন্ত। এখান থেকে ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলো ধারা একসাথে গুরুত্বপূর্ণ। ১৩৫ থেকে ১৫৫ ধারা পর্যন্ত প্রতিটি ধারা ভালোভাবে পড়তে হবে। এর ভেতরে জবানবন্দি, জেরা, পুনঃজবানবন্দি, ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন ইত্যাদি বিষয় আলোচনা আছে। এর বাইরে ১৫৯ ধারা স্মৃতি পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে আলোচনা করেছে, এটিও গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। আবারো মূল বই থেকে সামান্য আলোচনা তুলে দিলাম আপনাদের জন্য। দেখুন।
“একটি বিরোধে বা আদালতে একটি মামলায় উভয় পক্ষেরই সাক্ষী থাকে। সাক্ষী একাধিকও হতে পারে। আপনি ধরুন বাদী পক্ষ, আপনার কয়েকজন সাক্ষী আছে। তাদেরকে আদালতে হাজির করতে গেলে অবশ্যই তাদের জবানবন্দি নিতে হবে বিচারকের সামনে। এই জবানবন্দিতে কোনো বিরুদ্ধ প্রশ্ন সাধারণত করা হয় না। সাক্ষীর নাম ঠিকানা, পরিচয়, ইত্যাদি আদালতে বিচারকের সামনে নিশ্চিত করার জন্য এই জবানবন্দি নেওয়া হয় প্রাথমিকভাবে; এ বাদেও সাক্ষীকে আরো কিছু জিজ্ঞাসার মাধ্যমে মামলার তর্কিত বিষয়বস্তু সুনির্দিষ্টভাবে জানার জন্য জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যে পক্ষের সাক্ষী সেই পক্ষেরই আইনজীবী বা নিজেদের পক্ষের আইনজীবী এই জবানবন্দি গ্রহণ করে থাকে। আবার আসামি পক্ষেরও সাক্ষীকে আসামি পক্ষের আইনজীবী জবানবন্দি গ্রহণ করে থাকেন। এটাকে সংক্ষেপে ইংরেজিতে Chief [চিফ] বলা হয়ে থাকে। জবানবন্দিকে ইংরেজিতে Examination in chief বলা হয়। এই ইংরেজিটা মনে রাখবেন। শুধু ইংরেজি শব্দবন্ধ দিয়েই অনেক সময় প্রশ্ন করা হতে পারে।
আর জেরা কি? খুব সিম্পল। যখন বিরুদ্ধ পক্ষের আইনজীবী তার প্রতিপক্ষের সাক্ষীকে কিছু জিজ্ঞাসা করেন সেটা জবানবন্দি না হয়ে ‘জেরা’ হবে। এর ইংরেজি হলো Cross Examination। আর পুনঃজবানবন্দি কি? জবানবন্দি এবং জেরা হবার পর আবারো যদি কোনো প্রয়োজনে নিজ নিজ সাক্ষীকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন পড়ে তাহলে সেটাই হলো পুনঃজবানবন্দি। এর ইংরেজি হলো Re-examination।
আর এগুলো গ্রহণের ক্রম? ১৩৮ ধারা মোতাবেক প্রথমে সাক্ষীর জবানবন্দি, তারপরে জেরা এবং তারপরে প্রয়োজন হইলে পুনঃজবানবন্দি। এখানে আরেকটা কথা গুরুত্বের সাথে মনে রাখবেন – পুনঃজবানবন্দিতে যদি কোনো নতুন বিষয়ের অবতারণা হয় যা কিনা মামলার বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রাসঙ্গিক, তবে বিপক্ষ আইনজীবী আবারো জেরা করিতে পারবেন উক্ত প্রতিপক্ষের সাক্ষীকে। প্রশ্ন এভাবে জটিল করে আসতেই পারে যে, কোন ধারামতে পুনঃজেরা করা যায়? অথবা পুনঃজেরা কখন করা যায়?
১৩৯ ধারায় বলা আছে – কেউ যদি আদালতের সমন অনুযায়ী আদালতে কোনো দলিল উপস্থাপন করে, তবে শুধু এই কারণেই সে সাক্ষী বলে বিবেচিত হবে না। ১৪০ ধারায় বলা হচ্ছে – চরিত্র সম্পর্কে সাক্ষীর জেরা ও পুনঃজবানবন্দি নেওয়া যেতে পারে।” [পৃষ্ঠা ৪৭০-৪৭১, একটি চিরুনি অভিযান – এমসিকিউ পর্ব]