How to read Penal Code [Part - 1]
‘দণ্ডবিধি কীভাবে পড়তে হবে’ – সে বিষয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে দণ্ডবিধির প্রাথমিক বা বেসিক অংশ তথা ১-১২০খ পর্যন্ত একটি সারসংক্ষেপ এই লেখায় রয়েছে। দণ্ডবিধির এই অংশটি পড়ার শুরুতে এবং শেষে আরেকবার পড়ে নিলে এই নিবন্ধটি আপনার বিশেষ কাজে দেবে আশা করি।
দণ্ডবিধির বেসিক অংশ কীভাবে পড়বেন?
দণ্ডবিধি আত্মস্থ করার প্রধান বিবেচনাসমূহ – পর্ব ১
[প্রবেশিকা ও ধারা ১-১২০খ]
দণ্ডবিধি একটি তত্ত্বগত আইন। কিন্তু পুরো দণ্ডবিধিটি যে তাত্ত্বিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত সেটিরই বর্ণনা করা আছে এর ১ থেকে ১২০খ পর্যন্ত ধারাগুলোতে। এমসিকিউ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পড়ার সুবিধার্থে দণ্ডবিধিকে প্রধান ৫টি ভাগে ভাগ করবো। এর প্রথম অংশে দণ্ডবিধির বেসিক শিরোনামের ভেতরে ধারা ১ থেকে ১২০খ, বিবিধ অপরাধ – ১ শিরোনামে ধারা ১২১ থেকে ২৯৮ পর্যন্ত, দেহ ও জীবন সংক্রান্ত অপরাধ শিরোনামে ২৯৯-৩৭৭ ধারা পর্যন্ত, সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ শিরোনামে ৩৭৮-৪৮৯ঙ পর্যন্ত এবং সবশেষে বিবিধ অপরাধ – ২ শিরোনামে ৪৯০-৫১১ ধারা পর্যন্ত। এই ৫টি ভাগের অধ্যায় উল্লেখসহ একটি ছক তুলে দেওয়া হলো আপনাদের পারসেপশনের সুবিধার্থে।
দণ্ডবিধিকে তত্ত্বগত আইন বলা হয় এই কারণে যে, এই আইনে প্রায় সমস্ত রকম ফৌজদারি অপরাধের কথা বলা আছে। এখানে প্রধান ফৌজদারি অপরাধগুলোর সংজ্ঞা, তার ব্যতিক্রম, বিভিন্ন শর্ত, প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা, উদাহরণ এবং কোন অপরাধের শাস্তি কী পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখ করা আছে। এককথায় সমস্ত অপরাধের সংজ্ঞা ও শাস্তির পরিমাণ উল্লেখ করা আছে। ফলে এটি তত্ত্বগত আইন। আর এই আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে ফৌজদারি কার্যবিধি [এটি একটি পদ্ধতিগত আইন] অনুযায়ী তার বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হয়। বাংলাদেশে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় এই দণ্ডবিধি এবং ফৌজদারি কার্যবিধিই প্রধানতম আইন। এর সাথে সাক্ষ্য আইনও কাজে লাগে। তবে বিশেষভাবে এটি মনে রাখলেই চলবে যে, দণ্ডবিধিতে তাত্ত্বিক যা বিষয়বস্তু বর্ণিত আছে তারই বাস্তব প্রয়োগ করা হয় ফৌজদারি কার্যবিধি দিয়ে। যাইহোক, ফৌজদারি কার্যবিধির কথা ভুলে যান। দণ্ডবিধি নিয়ে আমরা কথা বলছি। চলে আসি মূল পয়েন্টে।
১৮৬০ সালে প্রণীত দণ্ডবিধির সবশেষ অধ্যায় হলো ২৩তম অধ্যায়। কিন্তু, কার্যত এখানে অধ্যায় আছে ২৪টি। ক্যামনে? কারণ, ৫ক নামে একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে পরবর্তীতে ১৯১৩ সালে। ফলে, ২৩তম অধ্যায়ে শেষ হলেও দণ্ডবিধির অধ্যায়ের প্রকৃত সংখ্যা ২৪টি। অন্যদিকে, ফৌজদারি কার্যবিধির অধ্যায় সংখ্যা হলো ৪৬টি। ২৩ এর দ্বিগুণ হলো ৪৬। এই অর্থে দণ্ডবিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধির অধ্যায় সংখ্যা মনে রাখতে পারেন।
আমরা দেখেছি যে, বিভিন্ন আইন বিভিন্ন ভাগে বা খণ্ডে বিভক্ত থাকে। উক্ত ভাগ বা খণ্ডের অধীনে এক বা একাধিক অধ্যায় থাকে। যেমন, ফৌজদারি কার্যবিধি ৯টি প্রধান ভাগে উক্ত ৪৬টি অধ্যায় বিন্যস্ত আছে। এরূপে সাক্ষ্য আইন বা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন – দুইটি আইনই তিনটি খণ্ডে বিভক্ত। কিন্তু, একই ধরণে দণ্ডবিধিতে এমন কোনো খণ্ড বা ভাগ বিস্তৃত নেই; বরং সরাসরি অধ্যায় শিরোনাম দিয়ে প্রতিটি বিষয়বস্তু স্বতন্ত্র অধ্যায় আকারে অবস্থান করে। তবে, মূল আইনপ্রণেতাগণ দণ্ডবিধিকেও কয়েকটি প্রধান ভাগে বিন্যস্ত করতে পারতেন; কেন তারা এরূপ করেননি সে সম্পর্কে আমাদের জানা নেই।
কিন্তু, আইনপ্রণেতাগণ না করলেও আমরা ছাত্রদের পড়ার সুবিধার্থে এটিকে যথেষ্ট ন্যায্যতার সাথেই ৫টি প্রধান ভাগে বিন্যস্ত করেছি। যেমন, একটু কল্পনা করুন যে, প্রধান প্রধান ফৌজদারি অপরাধসমূহের [criminal offence] সংঘটন কিসের ভিত্তিতে হয় আমাদের সমাজে? লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, মানুষের শরীর তথা দেহ, মানুষের জীবন এবং মানুষের সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রধান ফৌজদারি অপরাধগুলো সংঘটিত হয়। যেমন, মানুষের সম্পত্তি নিয়ে চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা ইত্যাদির মতো অপরাধ হরহামেশাই ঘটে যেগুলো সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ। আবার, মানুষের জীবননাশ সহ শরীরের উপর আঘাত, মানুষকে অপহরণ, অবৈধভাবে আটক করা, ধর্ষণ ইত্যদির মতো অপরাধগুলোও আমাদের চারপাশে হরহামেশাই ঘটতে থাকতে দেখি যেগুলো মানুষের দেহ ও জীবন সম্পর্কিত অপরাধ। এগুলো প্রধান প্রধান ফৌজদারি অপরাধ হলেও এরও বাইরে আরো নানাবিধ ফৌজদারি অপরাধ রয়েছে। যেমন, মিথ্যাভাবে সাক্ষ্য প্রদান করা, রাষ্ট্রদ্রোহিতা করা, দাঙ্গা করা, মারামারি করা ইত্যাদির মতো অপরাধগুলোও ফৌজদারি অপরাধ [criminal offence]। আরো মজার দিক হলো – আরো কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো প্রকৃতির দিক খানিকটা দেওয়ানি প্রকৃতির, কিন্তু, সেগুলোকেও ফৌজদারি অপরাধের অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে; যেমন, বিবাহ সংক্রান্ত অপরাধ বা মানহানির অপরাধ।
উপরে বর্ণিত নানা প্রকারেরই ফৌজদারি অপরাধের পরিচয় পাওয়া যায় দণ্ডবিধিতে। কিন্তু, অপরাধের ধরণ বা প্রকৃতি অনুসারে বিশেষ বিশেষ খণ্ডে বা ভাগে বিভক্তি করা নাই দণ্ডবিধিতে। পুরো দণ্ডবিধি পড়ে যখন এটিকে পর্যালোচনা করবেন এর নানা অপরাধের ধরণের প্রকৃতি এবং বিস্তৃতি নিয়ে – তখন স্পষ্টতই দণ্ডবিধিতে প্রচ্ছন্ন একটি বিভক্তি চোখে পড়বে। সেই অনুসারেই এই আইনটিকে আমরা নিম্নোক্তভাবে প্রধান প্রধান ৫টি ভাগে ভাগ করতে পারি। এতে করে, পুরো আইনের পারসেপশন বা সম্যক উপলব্ধি সম্ভব এবং তা সহজতর হয়।
এখানে একটি ছক দেওয়া ছিলো দণ্ডবিধির মূল অধ্যায়গুলোর বিভক্তি সম্পর্কে। ছকটি ওয়েবসাইটের জন্য বড় হয়ে যায় বিধায় সেটি এখানে যুক্ত করা হলো না। বরং তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রদান করা হলো –
প্রথম অংশ : ১-১২০খ : দণ্ডবিধির বেসিক
দ্বিতীয় অংশ : ১২১-২৯৮ : বিবিধ অপরাধ – ১
তৃতীয় অংশ : ২৯৯-৩৭৭ : দেহ সম্পর্কিত অপরাধ
চতুর্থ অংশ : ৩৭৮-৪৬২খ : সম্পত্তি সম্পর্কিত অপরাধ
পঞ্চম অংশ : ৪৬৩-৫১১ : বিবিধ অপরাধ – ২
দণ্ডবিধির শুরুর অংশ বা প্রাথমিক অধ্যায় সম্পর্কে পরের পৃষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সারসংক্ষেপটি দেখে নিয়ে পরের পৃষ্ঠা থেকে আলোচিত যুক্তিবিন্যাস পড়তে থাকুন।
এখানেও একটি সুন্দর ছকবদ্ধ সারসংক্ষেপ দেওয়া আছে যা কিনা এই ফেসবুক লিংকে গেলে দেখতে পাবেন।
এবার আসুন জেনে নেই, কেন দণ্ডবিধির ১ থেকে ১২০খ ধারা পর্যন্ত দণ্ডবিধির বেসিক বলে উল্লেখ করলাম আমরা?
সংজ্ঞার অধ্যায় সম্পর্কে
দণ্ডবিধিতে যে বিভিন্নরকম অপরাধের সংজ্ঞা ও শাস্তির পরিমাণ উল্লেখ আছে, সেগুলোরও একটি ভিত্তি আছে। একটি ছোট্ট উদাহরণে যাই। ধরুন, দণ্ডবিধিতে কোনো একটি সংজ্ঞায় ‘অসাধুভাবে’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘অসাধুভাবে’ শব্দটির সংজ্ঞা দণ্ডবিধিতে ২৪ ধারায় দেওয়া আছে। ফলে দণ্ডবিধির যেকোনো স্থানে যেকোনো অপরাধের সংজ্ঞায়, ব্যাখ্যায় বা উদাহরণে যখন এই ‘অসাধুভাবে’ শব্দটি ব্যবহার হবে সেটির অর্থ তখন উক্ত ২৪ ধারায় বর্ণিত ‘অসাধুভাবে’ শব্দটির সংজ্ঞা অনুযায়ীই ব্যাখ্যা করতে হবে। অর্থাৎ দণ্ডবিধির সংজ্ঞাগুলো এই বেসিক অংশে বর্ণিত বিভিন্ন শব্দের সংজ্ঞা অনুযায়ীই ব্যাখ্যা করতে হবে। যেমন, চুরির সংজ্ঞায় ৩৭৮ ধারায় বলা আছে যে, “কোনো ব্যক্তি যদি কারো দখল হতে তার সম্মতি ব্যতীত কোনো অস্থাবর সম্পত্তি অসাধুভাবে গ্রহণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে উক্ত সম্পত্তি অনুরূপভাবে গ্রহণের জন্য স্থানান্তর করে, তবে উক্ত ব্যক্তি চুরি করেছে বলে গণ্য হবে [Whoever, intending to take dishonestly any movable property out of the possession of any person without that person’s consent, moves that property in order to such taking, is said to commit theft.]
এই ধারায় ব্যবহৃত ‘অসাধুভাবে’ শব্দটি দণ্ডবিধির ২৪ ধারায় বর্ণিত সংজ্ঞানুসারে অর্থ প্রকাশ করবে বা ব্যাখ্যা করতে হবে। এরূপে ব্যবহৃত অন্যান্য শব্দও পুরো দণ্ডবিধি জুড়ে দণ্ডবিধিতে বর্ণিত সংজ্ঞানুসারেই [সংজ্ঞাগুলো প্রধানত ব্যাখ্যাত আছে ৬-৫২ক ধারা পর্যন্ত] ব্যাখ্যা করতে হবে। ফলে, এটিকে অনায়াসেই দণ্ডবিধির বেসিক অংশ বলে চিহ্নিত করা যায়।
আবার, আপনারা জানেন যে, দণ্ডবিধিতে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি বর্ণিত আছে। কিন্তু সেই শাস্তিসমূহের ব্যাখ্যা কেমন হবে বা তার প্রয়োগনীতি কি হবে সেসব সম্পর্কেও মূলনীতিগুলোও এই বেসিক অংশে আছে যা কিনা দণ্ডবিধির আরেকটি অধ্যায়। অধ্যায় ৩। এর শিরোনাম ‘সাজা প্রসঙ্গে’ [Of punishments]। এই অধ্যায়ের গুরুত্ব বোঝার জন্যও একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে যে, ধরুন, দণ্ডবিধির কোথাও বলা আছে যে, কোনো অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড হবে এবং তৎসঙ্গে জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডিত করা যাবে। তো, এই জরিমানা কত হবে তা নির্দিষ্টভাবে বলা না থাকলে করণীয় কী হবে? কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে তার প্রতি জরিমানা কত হবে তা নির্দিষ্ট করা যাবে কোন নীতির ওপর ভিত্তি করে? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে তৃতীয় অধ্যায়ে থাকা দণ্ডবিধির ৬৩ ধারায়। আবার, যদি কোনো কারাদণ্ড নেই, কিন্তু শুধুই অর্থদণ্ডের বিধান আছে এমন শাস্তিমূলক ধারার ক্ষেত্রে তা প্রয়োগের সময় যদি জরিমানার টাকা শোধ করতে চায় একজন তাহলে কোন পদ্ধতিতে তা শোধ করতে হবে? অথবা, ভাবুন যে, আদালত কারাদণ্ডের সাথে অর্থদণ্ড বা জরিমানাসহ শাস্তি ঘোষণা করলো; কিন্তু, আসামি উক্ত জরিমানা শোধে ব্যর্থ হলেন তাহলে কীভাবে তা আদায় করতে হবে বা কীভাবে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো সাজা প্রদান করা যাবে কিনা, বা উক্ত অতিরিক্ত সাজা প্রদান করা হলে তা সশ্রম হবে নাকি বিনাশ্রম হবে ইত্যাদি নানা প্রশ্নই উত্থাপিত হতে পারে। এ সকল প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছে এই তৃতীয় অধ্যায়টি। এই অধ্যায়ে ফলে, শাস্তি প্রদানের মূল নীতিসমূহ বর্ণনা করেছে যা কিনা আবারো সেই পুরো দণ্ডবিধি জুড়েই প্রযোজ্য হতে থাকবে। পুরো দণ্ডবিধিতেই যেহেতু এই অধ্যায়টিও প্রভাব বিস্তার করে থাকে, ফলে এটিকেও আমরা দণ্ডবিধির বেসিক অংশ বলে চিহ্নিত করতে পারি।
দণ্ডবিধির চতুর্থ অধ্যায় প্রসঙ্গে
তুলনামূলক জটিল হলেও আরেকটি উদাহরণ বিবেচনায় নিতে পারেন। ধরুন, খুন করা একটি অপরাধ। কিন্তু যখন আপনি নিজের আত্মরক্ষার্থে খুন করবেন, অর্থাৎ সামান্য মুহূর্ত একটু এদিক-ওদিক হলেই আপনি নিজেই খুন হয়ে যেতে পারতেন, এমতাবস্থায় আপনি যদি সেই আক্রমণকারীকে খুন করে বসেন তাহলে এটি কোনো অপরাধ নয়। এটি দণ্ডবিধির ১০০ ধারার বিষয়বস্তু। ১০০ ধারায় আরো সুনির্দিষ্টভাবে ৬টি কারণ উল্লেখ করা আছে যেখানে আপনি অন্য একজনকে খুন করে বসলেও সেটি খুন বলে গণ্য হবে না আইনের দৃষ্টিতে। যেমন, একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে – ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কোনো নারীকে আক্রমণ করা হলে, সেই নারীটি উক্ত সম্ভাব্য ধর্ষণকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে খুন করে ফেললেও সেটির জন্য খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবেন না উক্ত ভিকটিম। এটিকে দণ্ডবিধির সাধারণ ব্যতিক্রম বলা হয়। তো, খুন কাকে বলে এটির সংজ্ঞা দণ্ডবিধিতে ৩০০ ধারায় দেওয়া আছে। তাহলে ৩০০ ধারায় থাকা খুনের সংজ্ঞাটি ১০০ ধারার এই ব্যতিক্রমসাপেক্ষে পড়তে হবে, যদিও ৩০০ ধারায় এটি বলা নাও থাকে যে, ১০০ ধারায় বর্ণিত বিষয়সমূহের ব্যতিক্রমসাপেক্ষে খুনের সংজ্ঞাটি বিবেচনা করতে হবে! ১০০ ধারাটি দণ্ডবিধির সাধারণ ব্যতিক্রম।
এরকম আরেকটি ব্যতিক্রম বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। দণ্ডবিধির ৮২ ধারায় বলা হয়েছে যে, ৯ বছরের কম বয়সী শিশু কোনো কাজ করলে তার কোনো কাজ বা বিচ্যুতি অপরাধের সংজ্ঞার মধ্যে পড়লেও তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না। অর্থাৎ, তা অপরাধের ব্যতিক্রম বলে চিহ্নিত হবে। এরূপ অবস্থায় দণ্ডবিধিতে বর্ণিত কোনো ফৌজদারি অপরাধ যেমন, চুরি সংক্রান্ত ধারা বা আঘাত এর ধারা ইত্যাদি কোনো সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যায় বা ব্যতিক্রম আকারে যদি উল্লেখ করা নাও থাকে যে, এরূপ কাজ ৯ বছরের কম বয়সী শিশু করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না; তথাপিও উক্ত ধারাটিতে ধরে নিতে হবে যে, সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহের ধারাগুলোতে [৭৬-১০৬ ধারাসমূহ] বর্ণিত ব্যতিক্রমসমূহ উল্লেখ করা আছে। এরকম আরো ‘সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ’ সংক্রান্ত সমস্ত ধারাই পুরো দণ্ডবিধিতে সমস্ত সংজ্ঞার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আকারে ধরতে হবে যদিও উক্ত অপরাধের সংজ্ঞার ধারায় ব্যতিক্রমের কথা উল্লেখ নাও থাকে – এই নীতিটির কথা সুনির্দিষ্টভাবে ৬ ধারাতে বলা আছে!
উদাহরণ প্রসঙ্গে ‘সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ’ এর কথা বললাম সর্বশেষ। এটি দণ্ডবিধির ৭৬ থেকে ১০৬ ধারা পর্যন্ত বিধৃত রয়েছে। এটি দণ্ডবিধির চতুর্থ অধ্যায় যার প্রধান শিরোনাম ‘সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ’ [General exceptions]। তাহলে এই ‘সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ’ দণ্ডবিধির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা কিনা পুরো দণ্ডবিধির সমস্ত অপরাধের সংজ্ঞাতেই প্রভাব বিস্তার করে। তাহলে এটিকেও দণ্ডবিধির বেসিক অংশ বলে ঘোষণা করতে কোনোই দ্বিধা নেই।
অপসহায়তা এবং যৌথ দায় সংক্রান্ত বিষয়ে
আবার, এরও পরের অধ্যায় অ্যাবেটমেন্ট নিয়ে। তথা অপসহায়তা নিয়ে। কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করার মাধ্যমে এটি হয়। এটি আসলে একটি যৌথ দায় সংক্রান্ত ধারণা। লক্ষ্য করে দেখবেন যে, সাধারণত ফৌজদারি যেকোনো অপরাধ একের অধিক ব্যক্তি মিলে সংঘটিত হয়ে থাকে। একের অধিক ব্যক্তি যখন কোনো অপরাধে যুক্ত থাকে তখন তাদের কারো দায় কখনো মূল অপরাধ সংঘটনকারীর সমান হতে পারে, আবার ভিন্নভাবেও তার দায়কে নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। কখন এরূপ একাধিক যুক্ত ব্যক্তির দায় কম বা বেশি বা সমান হবে ইত্যাদি নির্ধারণের নীতি রয়েছে। এ সংক্রান্ত নীতিসমূহ দণ্ডবিধির ৫ [১০৭-১২০ ধারা] এবং ৫ক [১২০ক-১২০খ ধারা] নং অধ্যায়ে বর্ণিত আছে। তবে, আরো একটি অংশ রয়েছে যা কিনা দণ্ডবিধির সংজ্ঞাসমূহের অধ্যায়ের ভেতরে অবস্থান করছে যেটির বিস্তৃতি ৩৪-৩৮ ধারা। তো, যৌথ দায় [Joint Liability] সংক্রান্ত ধারাসমূহ হলো নিম্নরূপ –
বিষয়বস্তু | অবস্থান | ধারার বিস্তৃতি |
যৌথ অভিপ্রায় [Common Intention] | ২ নং অধ্যায়ের একাংশ | ৩৪-৩৮ |
অপসহায়তা [Abetment] | ৫ নং অধ্যায় পুরোটা | ১০৭-১২০ |
অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র [Criminal Conspiracy] | ৫ক নং অধ্যায় পুরোটা | ১২০ক-১২০খ |
এইসব যৌথ দায় সংক্রান্ত ধারণাগুলো কীভাবে পুরো দণ্ডবিধি জুড়ে প্রযোজ্য হয় তার একটি উদাহরণও আমরা বুঝে নিতে পারি। যেমন, কোনো চুরি একজন কর্তৃক সংঘটিত হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে যে, উক্ত চুরি সংঘটনকারীকে অন্য কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি অপসহায়তা করেছে চুরি করতে। সেক্ষেত্রে, চুরি সংঘটনকারী এবং চুরিতে সহায়তাকারীর দায় ও সাজা নির্ধারণ কোন নীতির ভিত্তিতে হতে পারে সে সম্পর্কে এইসব যৌথ দায় সংক্রান্ত ধারাসমূহে তার বিধান ও নীতি বর্ণনা করা আছে। সুতরাং দেখা যায় যে, এইসব ধারাসমূহও কোনো না কোনোভাবে পুরো দণ্ডবিধির যেকোনো ধারাতে প্রযোজ্য হয়ে যেতে পারে প্রাসঙ্গিক হলে। সুতরাং, এগুলোও দণ্ডবিধির বেসিক অংশ।
শেষ কথা
এরূপভাবে দণ্ডবিধির ১ থেকে ১২০খ পর্যন্ত যা কিছু বর্ণিত আছে তার সবই দণ্ডবিধির বেসিক অংশ হিসেবে আমরা চিহ্নিত করেছি। দণ্ডবিধিকে আত্মস্থ করতে চাইলে বলা বাহুল্য যে, এই বেসিক অংশের উপলব্ধি যতো পাকাপোক্ত থাকবে, ততো বেশি দণ্ডবিধিকে সহজে আয়ত্ব করা যাবে। সুতরাং, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বলি এভাবে যে, দণ্ডবিধির প্রথম এই বেসিক অংশ বোঝার জন্য, তথা, আপনি এই ১২০টি ধারা আয়ত্ব করতে ১০ দিন সময় দিয়ে থাকেন তাহলে বাকী ১০ দিনে অবশিষ্ট প্রায় ৪০০টি ধারা সহজেই পড়ে ফেলতে পারবেন দ্রুততার সাথে। অর্থাৎ দণ্ডবিধির পাঠ আপনার জন্য সহজ হয়ে উঠবে। দণ্ডবিধি এমনিতেই তত্ত্বীয় আইন। কিন্তু, এই আইনটি পড়ারও একটি তত্ত্বীয় কাঠামো হলো এই বেসিক অংশটি। এটি হলো তত্ত্বেরও তত্ত্ব!
আবার অন্যদিকে, বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা যেহেতু একধরণের সৃজনশীল এবং একই সাথে সমস্যা সমাধান ধরণের প্রশ্নে হতে থাকছে, সেহেতু, আইনের বেসিক উপলব্ধি না থাকলে অনেক ধরণের সমস্যাকে আপনি পরীক্ষার হলে তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবেলাও করতে পারবেন না। সেকারণে, দণ্ডবিধির পাঠকে সহজ করার যেমন এই অংশকে গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে, তেমনি লিখিত পরীক্ষাতে এবং ওকালতিতে ভালো করার জন্যও এটি আবশ্যকীয়।
পড়ার ক্ষেত্রে সাধারণ নির্দেশনা
এবারে আমরা এর প্রতিটি অংশের আলাদা আলাদা করে সংক্ষিপ্ত পরিচয় বুঝবো। সম্ভব হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক অনুধাবনেরও চেষ্টা করবো।
প্রতিটি আইনেই শুরুতে উক্ত আইনের উদ্দেশ্য, কার্যকরীকরণের সময়, সাল, বিস্তৃতি, সংজ্ঞা এবং আইনের প্রাধান্য বিষয়ক ধারা সন্নিবেশিত থাকে। দণ্ডবিধিও তার ব্যতিক্রম নয়। এর ধারা ১ থেকে ৫ পর্যন্ত এর প্রথম অধ্যায়। এই কয়েকটি ধারায় সংজ্ঞামূলক ধারাগুলো নেই, তবে এর একেবারে বেসিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ আছে। ৩ ও ৪ ধারা দুইটি একত্রে পাঠ করতে হবে। একই বিষয়বস্তু সামান্য হেরফেরে বর্ণিত আছে। কোনো অপরাধ দেশের ভেতরে হোক অথবা বাইরে হোক; অপরাধী দেশের নাগরিক হোক অথবা বাইরের হোক; নীতি বা বিবেচনা একটাই – দেশের আইনে উক্ত অপরাধটি ‘অপরাধ’ কিনা – তাহলেই দেশের আদালতে দণ্ডবিধি অনুযায়ী তার বিচার করা যাবে! এরপরের ৫ ধারাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বুঝে নেবেন ধারাটি। এই ধারায় যে নীতির কথা বলা আছে, তা প্রায় প্রতিটি মূল আইনেই কোনো না কোনোভাবে বলা আছে। নীতিটি হচ্ছে – বিশেষ আইন সাধারণ আইনের চেয়ে প্রাধান্য পাবে। দণ্ডবিধি একটি সাধারণ আইন বা মূল আইন। অপরাধ সংক্রান্ত অন্য কোনো বিশেষ আইনের উপস্থিতি থাকলে দণ্ডবিধির সংজ্ঞা কম গুরুত্ব বহন করবে বা কোনো গুরুত্বই বহন করবে না – এটিই এই নীতির মূল কথা। আইনের অন্যতম প্রধান নীতিগুলোর মধ্যে এটি একটি।
অনেক অতিচালাক শিক্ষার্থী ভাবতে পারেন যে, এইরকম একটি তত্ত্বীয় বিষয়সমৃদ্ধ ধারা থেকে এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রশ্ন আসবে না! উক্ত অতিচালাকের গলায় কিন্তু দড়ি হয়ে যেতে পারে!! ৫ ধারা থেকে ধারাভিত্তিক বা বিষয়বস্তুভিত্তিক প্রশ্ন আসতে পারে। গুণগত মানের দিক থেকে এটি একটি ভালো এমসিকিউ প্রশ্ন হতে পারে। আবার এই ৫ নং ধারাটি বুঝে উঠলে অন্যান্য আইনের ক্ষেত্রেও সমজাতীয় ধারণার ধারা আছে। ফলে সেটিও বুঝে ফেলা ও মনে রাখা সহজ হবে।
২য় অধ্যায়ে আসুন এবার। এর বিস্তৃতি ৬ থেকে ৫২ক পর্যন্ত। এই ধারাগুলোর বা অধ্যায়টির শিরোনাম হলো ‘সাধারণ ব্যাখ্যাসমূহ’। এই শিরোনামে এখানে মূলত দণ্ডবিধিতে বহুল ব্যবহৃত হয়েছে বা একাধিক অর্থ করা যেতে পারে বা কনফিউশন হতে পারে এমন শব্দগুলোর সংজ্ঞা দেওয়া আছে। যেমন, নারী বা নর বলতে কী বোঝাবে, বা বিচারক, আদালত, অসাধুভাবে, দলিল ইত্যাদির সংজ্ঞা দেওয়া আছে। বিচারকের সংজ্ঞা কত ধারায় আছে দণ্ডবিধিতে এমন প্রশ্ন বিগত সালে এসেছিলো। তার মানে এগুলো বাছাই করে সিস্টেম করে হজম করে ফেলতে হবে। যাইহোক, এরকম বিভিন্ন শব্দের সংজ্ঞা দেওয়া থাকলেও এর শুরুর দুইটি ধারায় [ধারা ৬ ও ৭] কোনো শব্দের সরাসরি সংজ্ঞা দেওয়া নেই। তবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা আছে যথাক্রমে দণ্ডবিধির ব্যতিক্রমসমূহ কীভাবে বিবেচনা করতে হবে এবং দণ্ডবিধির যেকোনো কোথাও সংজ্ঞামূলক ধারণা কীভাবে পাঠ করতে হবে। যেমন ধরুন, এর ৬ ধারাটি। আমি নিজে এই ধারাটিকে দণ্ডবিধির ‘সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ’ অর্থাৎ ৭৬-১০৬ ধারাগুলোর ‘প্রাণভোমরা’ নামে অভিহিত করেছি আমরা আমাদের লেখা বইয়ে। ধারাটি সহজ। পড়লেই বুঝবেন। উপরে আলোচনা প্রসঙ্গে বিষয়টি বলেছিলাম।
ছক
অন্যদিকে, ৬ ধারা সংক্রান্তে এই নিবন্ধেই ‘দণ্ডবিধির চতুর্থ অধ্যায় প্রসঙ্গে’ অংশে উদাহরণসহ আলোচনা ছিলো। ৬ ধারার সাথে দণ্ডবিধির ৭৬-১০৬ ধারার সংযুক্তির বিষয়েও বলা ছিলো। সেটিই প্রয়োজনে আবারো দেখে নিন। অন্যদিকে ৭ ধারা সংক্রান্তে আলোচনা আছে ভিন্নতররূপে। ৭ ধারায় বলেছে দণ্ডবিধিতে কোনো একটি শব্দ একবার ব্যাখ্যাত হয়ে থাকলে সেটিকে পুরো দণ্ডবিধিতে একই অর্থে ব্যাখ্যা করতে হবে। দণ্ডবিধির ৮ ধারা থেকে ৫২ক ধারা পর্যন্ত সব সংজ্ঞাসমূহ একত্রে থাকলেও বলা বাহুল্য যে, দণ্ডবিধিতে অন্যান্য ধারাতেও সংজ্ঞামূলক ধারণাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে প্রাসঙ্গিকভাবে। যেমন, ৩৫০ ধারায় বলপ্রয়োগ এর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। ৩৫০ ধারাটি সংজ্ঞার অধ্যায়ের অধীন না হলেও তা যেহেতু একটি শব্দকে ব্যাখ্যা করেছে, সুতরাং এই শব্দকেও সংজ্ঞামূলক আকারে ধরে নিয়েই দণ্ডবিধিতে যেখানেই বলপ্রয়োগ শব্দ ব্যবহার করা থাকুক না কেন তা উক্ত ৩৫০ ধারার বর্ণনানুসারেই ব্যাখ্যা করতে হবে। এটিই এই ৭ ধারার মূল কথা।
২য় অধ্যায় নিয়ে আরেকটু কথা আছে। ৩৪ থেকে ৩৮ ধারা – এই ৫টি ধারা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ৫টি ধারা একত্রে পড়তে হবে। এখানে ‘সাধারণ অভিপ্রায়’ নিয়ে আলোচনা আছে। এই কয়েকটি ধারা এবং ধারণার সাথে দণ্ডবিধির ৫ ও ৫ক অধ্যায় দুইটির ধারণাগুলোর সাথে গুলিয়ে ফেলেন অনেকেই। পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্য বুঝতে পারেন না। অপরাধের ক্ষেত্রে যৌথ দায় নির্ধারণ করা হয় নিম্নোক্ত ৩টি টপিক থেকে। যথা, ১. সাধারণ অভিপ্রায় [ধারা ৩৪-৩৮]; ২. অপরাধে সহায়তা [ধারা ১০৭-১২০] এবং ৩. অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র [ধারা ১২০ক-১২০খ]।
এগুলো ভালো করে না বুঝে পরীক্ষার বৈতরণী পার হতে পারলেও বাস্তব জীবনে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন। এখনই সময়! এই তিনটি অংশ নিয়ে পরে একসাথে সারসংক্ষেপ করা আছে।
৩য় অধ্যায়ে আসি এবার। এর বিস্তৃতি ৫৩-৭৫। এর শিরোনাম ‘সাজা প্রসঙ্গে’। প্রতিটি অপরাধের সংজ্ঞার ধারায় অথবা তার পরপরই ধারাগুলোতে একটি অপরাধের শাস্তির পরিমাণ কী হবে, তা কোন কোন শর্তের অধীনে হবে এসবের বর্ণনা থাকলেও আলাদাভাবে দণ্ডবিধিতে এই অধ্যায়ে সাজা বা শাস্তি প্রসঙ্গে বেসিক নীতিসমূহ বর্ণিত আছে। এই ৩য় অধ্যায়ের ধারাগুলোতে কোনো নির্দিষ্ট অপরাধের শাস্তির কথা বলা হয়নি; বলা হয়েছে শাস্তির নীতি প্রসঙ্গে। যেমন, শাস্তি কত প্রকার, শাস্তি হ্রাস বা লঘু করার ক্ষমতা, সর্বোচ্চ শাস্তি কী, সশ্রম বা বিনাশ্রম সাজার নীতি, অর্থদণ্ড বা জরিমানার নীতি, নির্জন কারাবাস ইত্যাদি প্রসঙ্গে এক্কেবারে বেসিক কথাগুলো। শাস্তির এই অধ্যায় থেকে ঝুমবৃষ্টির মতো প্রশ্ন আসতে পারে। ২০১৫ সালের এমসিকিউ পরীক্ষায় দণ্ডবিধির জন্য বরাদ্দকৃত ২০টি প্রশ্নের ভেতরে ৮টি প্রশ্ন শুধু এই অধ্যায় থেকেই এসেছিলো। এটি এমন একটি অধ্যায় যার প্রতিটি ধারাই ঠোটস্থ রাখতে হবে, কোনো ধারাই বাদ দেবার সুযোগ নেই। ফলে গুরুত্ব দিয়ে এটি পড়তে হবে। শাস্তির নীতি অধ্যায়টি মনে রাখার জন্য দুইটি স্তরে নিম্নোক্ত উপায়ে ছক আকারে মনে রাখার চেষ্টা করতে পারেন। প্রথমেই এই তৃতীয় অধ্যায়ের ৫৩-৭৫ ধারাসমূহকে নিচের ছকের মতো করে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে।
ছক
এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে সংক্ষিপ্তসার মূলত বিগত প্রশ্নগুলোর ব্যাখ্যা করার সময় বর্ণিত আছে।
৪র্থ অধ্যায় সেই ৬ ধারাটির সাথে সম্পর্কিত। ‘সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ’ এর শিরোনাম। ৭৬ থেকে ১০৬ ধারা পর্যন্ত। তবে এই অধ্যায়ে একটি আলাদা উপশিরোনামে ৯৬-১০৬ ধারা পর্যন্ত ধারাগুলো বিন্যস্ত আছে – ‘ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার’ শিরোনামে। এটি একটি মজার ও সহজ অংশ। এটি প্রধানত দুইটি অংশে ভাগ করে পড়বেন।
ছক
৭৬-৯৫ ধারার মধ্যেকার অংশটুকুতে অনেকগুলো বিষয়ই বলা আছে। তবে, ৭৬-৭৯, ৮০-৮১ এবং ৮২-৮৬ এভাবে কিছু প্রধান ভাগে ভাগ করে পড়ে নেওয়া যেতে পারে মনে রাখার সুবিধার্থে। বস্তুতপক্ষে, এর কোনো ধারাই বাদ দেওয়া যায় না, কিন্তু এর প্রধান প্রধান ধারাগুলো অন্তত মনে রাখতে হবে। ৮২-৮৬ ধারাসমূহ এখানে জনপ্রিয় অংশ। শব্দের হেরফেরে এসব থেকে উত্তর ভিন্ন হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, অতি সতর্কতার সাথে সেগুলো পরীক্ষার হলে দেখতে হবে এবং সঠিকভাবে উত্তর বাছাই করতে হবে। এরকম ক্ষেত্রে আসলে পর্যাপ্ত অনুশীলনের বিকল্প নেই। অন্যদিকে, ৯৬-১০৬ ধারাসমূহ যেখানে ‘ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার’ শিরোনামে ব্যতিক্রমসমূহ বর্ণনা করা আছে সেটির কমবেশি একটি ছন্দবদ্ধ অবস্থায় বিন্যস্ত আছে বলে মনে রাখা সহজ। সে সংক্রান্তে পাশের পৃষ্ঠায় থাকা ফ্লো চার্টটি কাজে দিতে পারে। সাথে তথ্যও দিয়ে রাখলাম।
৯৬ ধারা এর বেসিক।
৯৭ ধারায় ৯৯ ধারাটির ব্যতিক্রমসাপেক্ষে দেহ ও সম্পত্তির ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকারের বিধান আলোচিত হয়েছে।
১০০, ১০১ এবং ১০২ এ দেহ সংক্রান্ত আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলা আছে।
একই ছন্দে আবার ১০৩, ১০৪ ও ১০৫ এ সম্পত্তি সংক্রান্ত আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলা আছে।
আবার ১০০ ধারায় দেহরক্ষা বিষয়ে কোন ৬টি ক্ষেত্রে অন্যের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যাবে সেটি বলা আছে, তেমনি ১০৩ ধারায় সম্পত্তি রক্ষায় কোন ৪টি ক্ষেত্রে অন্যের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যাবে সেটি বলা আছে।
১০১ ও ১০৪ ধারায় মৃত্যু ব্যতীত অন্য কোনো ক্ষতি করা যেতে পারে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে।
১০২ ও ১০৫ ধারায় আত্মরক্ষার অধিকারের বলবৎকাল বা স্থায়িত্বকাল উল্লেখ করা আছে।
ছক
৫ম অধ্যায়ে অপরাধে সহায়তা বা অপসহায়তা, প্ররোচনা ইত্যাদি সম্পর্কে অনেকগুলো ধারায় [১০৭ থেকে ১২০] বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে। তবে ১০৭, ১০৮, ১০৯ এর প্রধান তিনটি ধারা। অন্য ধারাগুলো বাদ দিয়ে পড়াটাও মুশকিল। তবে কম করে হলেও ১১৫, ১১৬ এবং ১১৭ ধারা তিনটি দেখবেন। এই অধ্যায় সম্পর্কে অল্প কথায় সারসংক্ষেপ করে দেওয়া অনুচিত বা প্রায় অসম্ভব। তবে, এই কথাটুকুন মনে রেখে ধারাগুলোকে পড়বেন যে, ১০৭-১০৮ক – এই তিনটি মূলত অপসহায়তা’র সংজ্ঞামূলক বা পরিচিতিমূলক ধারা। আর, ১০৯-১১৬ ধারা এর শাস্তির নীতিসমূহ বর্ণনা করলেও মূলত ১০৯ ধারার সাথে ১১৬ ধারা মিলিয়ে পড়তে হবে। তারও সাথে ১১৫ ধারাটি বিবেচনায় নিলে অপসহায়তা’র শাস্তির প্রধান দিকগুলো অন্তত শেষ হয়। এছাড়া, অন্যান্য ধারাতে আরো জটিলভাবে বিন্যস্ত বৈচিত্রময় পরিস্থিতির সাপেক্ষে শাস্তির নীতি কী হবে তা বলা আছে। ১০৯, ১১৫ ও ১১৬ ধারায় বর্ণিত শাস্তিসমূহ প্রশ্নের জনপ্রিয় ক্ষেত্র বিধায় নিচে একটি ছক দিয়ে রাখা হলো আপনাদের মেমোরাইজেশনের জন্য।
ছক
অপসহায়তার ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ সংশ্লিষ্ট ধারায় যদি উল্লেখ থাকেই তাহলে সেই শাস্তিটিই প্রযোজ্য হবে [১০৯ ধারার পাঠে এটি স্পষ্ট হয়]। কিন্তু, যখন একজন অপসহায়তাকারীর শাস্তি নির্দিষ্টভাবে কোথাও উল্লেখ না থাকে এবং তা সংঘটিত হয় বা না হয়, তাহলে কীভাবে কোন শর্তে শাস্তি নির্ধারণ করা হবে সেই কথাটিই উপরোক্ত ধারাসমূহে বলা আছে। ফলে, মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং যেকোনো মেয়াদী কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে অপসহায়তাকারীর শাস্তি প্রদানের নীতি কী হবে সেটিই উপরোক্ত ধারাসমূহে প্রধানত বলা আছে। সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহের পরীক্ষার উপযোগী করে মেমোরাইজেশনের আরেকটি তালিকা নিচে দিয়ে রাখা হলো। আপনারাও মূল ধারা দেখে এটির পাঠ ভালোভাবে সেরে নেবেন এজন্য যে, অপসহায়তা তথা এ্যাবেটমেন্ট এর সাজার নীতি দিয়েই ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র’ অপরাধটির শাস্তিও নির্ধারণ করতে হয় প্রধানত। ফলে, এটি মনোযোগ দিয়ে বোঝার কোনোই বিকল্প নেই।
ছক
এরপর ৫ক অধ্যায়। এই অধ্যায়টি ১৮৬০ সালে যখন প্রণীত হয় তখন ছিলো না। ১৯১৩ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীনে থাকার সময়ই একটি সংশোধনীর মাধ্যমে এই অধ্যায়টি যুক্ত হয় দুইটি ধারা দিয়ে; ১২০ক ও ১২০খ [CHAPTER VA was inserted by the Indian Criminal Law (Amendment) Act, 1913 (Act No. VIII of 1913)]। এই দুইটি ছোট্ট ধারা থেকেই অনেকগুলো প্রশ্ন করা সম্ভব। এর প্রতিটি শব্দ বুঝে বুঝে পড়ে নেবেন। তবে, এ বিষয়েও একটি ছক করে দেওয়া উচিত। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে শাস্তির নীতি প্রয়োগ করার সময় প্রধান বিবেচনাটি হলো – কোনো অপরাধ ২ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় নাকি তার কম? নিচের ছকটি দেখলেই এটি পরিষ্কার হয়ে যাবে আশা করি।
ছক
দণ্ডবিধিতে যৌথ দায় সংক্রান্ত নীতির ভেতরে ১-১২০খ পর্যন্ত আলোচিত বিষয়সমূহের আরেকটি দিক বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, এই অংশে সাধারণ অভিপ্রায়ের ক্ষেত্রটি তখনই প্রয়োগযোগ্য যখন কিনা অপরাধটি সংঘটিত হয়। অন্য, দুইটির ক্ষেত্রে অপরাধটি সংঘটিত না হলেও সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। নিচের ছকটিও মনে রাখুন ১৪৯ ও ৩৯৬ ধারার তথ্যসমেত।
ছক
তো, এই হলো দণ্ডবিধির বেসিক অংশের সারসংক্ষেপ। শাস্তির নীতি সংক্রান্তে অধ্যায়ের কিছু ধারা নিয়ে খানিকটা আলোচনার বিস্তার করা প্রয়োজনীয় হলেও এই সংস্করণে তা সম্ভব না হওয়ায় আমরা দুঃখিত।
মুরাদ মোর্শেদ
অ্যাডভোকেট ও আইনের ধারাপাত সিরিজ গ্রন্থের প্রধান লেখক
01712-908561