অনলাইন জুম ক্লাসে

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

২৪ জুন থেকে শুরু

তথ্য জানতে / ভর্তি হতে : 01309-541565

দেওয়ানি আপিল ও রিভিশন বোঝার জন্য সহজ ফ্লো চার্ট

[ডোন্ট মাইন্ড, একটা প্রচার চালিয়ে নেই যে, আইনকানুন একাডেমিতে ক্র্যাশ কোর্স শুরু হতে যাচ্ছে ঢাকায় ফার্মগেট শাখায় । আত্মবিশ্বাস কম থাকলে উক্ত ক্র্যাশ কোর্সে জয়েন করার জন্য বিস্তারিত জানতে ফোন দিতে পারেন আমাকে : 01712-908561। অথবা ফোন করার ঝামেলা নিতে না চাইলে এই লিংক ভিজিট করে নিন, সিদ্ধান্ত ফাইনাল করে ফোন দিন। ধন্যবাদ।]

দেওয়ানি আপিল ও রিভিশন থেকে প্রশ্ন আসেই প্রতিবার। সাথে রিভিউ সংক্রান্ত বিষয়ও বুঝে রাখা দরকার, যদিও রিভিউ নিয়ে এই লেখায় আলোচনা করার সুযোগ পেলাম না সময়ের অভাবে। শিক্ষার্থীগণ এসব নিয়ে বেশ গুলিয়ে ফেলেন। গুলিয়ে ফেলার মূল জায়গাটা হলো – দেওয়ানি আপিল এর জায়গায় রিভিশন মনে করে অনেকে উত্তর করে, আবার অনেকে রিভিশন এর জায়গায় আপিলের এখতিয়ার ভেবে উত্তর করে। সেই উত্তর করার ক্ষেত্রে আসলে মূল মনোযোগ রাখতে হয় যে, প্রশ্নটি কোন বিষয় নিয়ে করা হয়েছে। তারপর সতর্কভাবে আপিল অথবা রিভিশনের এখতিয়ার সম্পর্কে সঠিক ও যথোচিতভাবে মনে করে উত্তরটি করতে হয়। সেকারণে এই লেখার অবতারণা। বিষয়টি আসলে খানিকটা জটিলও বটে। তবে আমার ধারণা স্টেপ বাই স্টেপ কিছু বিষয় একে একে বুঝতে থাকলে কোনো সমস্যা হবার কথা নয়।

দেওয়ানি আপিল ও রিভিশন বোঝার জন্য শুরুতেই প্রয়োজন দেওয়ানি আদালতের গঠন বোঝা। দেওয়ানি আদালত এর পরিচয় দেওয়ানি কার্যবিধিতে বলা নেই; আছে ‘দেওয়ানি আদালত আইন, ১৮৮৭’ নামে একটি আইনে। উক্ত আইনে অধ্যায় দুই তে ৩ ও ৪ ধারায় যথাক্রমে ‘দেওয়ানি আদালতের শ্রেণিবিভাগ’ এবং ‘জজগণের সংখ্যা’ শিরোনামে যেসব তথ্য আছে, তাতেই জানা যায় দেওয়ানি আদালতের গঠন এবং জজদের নাম সম্পর্কে।

দেওয়ানি আদালতের এই গঠনকাঠামোটি মূলত একটি জেলার বিচার বিভাগের গঠন। কিন্তু, এরও উপরে সুপ্রিম কোর্টের আরেকটি অংশ আছে সেটা ভুলে গেলে চলবে না। সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ। ফলে দেওয়ানি আদালতের পূর্ণাঙ্গ গঠনটি নিম্নোক্তভাবে বোঝা দরকার, বিশেষত আপিল ও রিভিশন বোঝার জন্য।

ফলে উপরের কাঠামোটি সবার আগে মনে রাখা প্রয়োজন। এরও পরে আরেকটি বিষয়ে ঢুকবো। আবারো, দেওয়ানি আদালত আইন, ১৮৮৭ এর আশ্রয় নিতে হবে। কেননা, দেওয়ানি কার্যবিধিতে যেমন দেওয়ানি আদালতের গঠন সম্পর্কে বলা নেই, তেমনিভাবে আপিল আদালত কে হবে বা কোন কোন আদালত কোন কোন আপিল শুনবেন সে সম্পর্কে কোনো কথা নেই!

ফলে, এবার সংশ্লিষ্ট দুইটি ধারা হলো [দেওয়ানি আদালত আইন, ১৮৭৭] – ২০ এবং ২১। প্রথমে ধারা ২০ এর সংশ্লিষ্ট অংশটুকু দেখুন।

“20 : Appeal from District and Additional District Judges : (1) Save as otherwise provided by any enactment for the time being in force, an appeal from a decree or order of a District Judge or Additional District Judge shall lie to the High Court Division. …….”

এর সারকথা হলো – জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজ কর্তৃক প্রদত্ত কোনো ডিক্রি বা আদেশ এ সংক্ষুব্ধ পক্ষ হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন।

এবার ২১ ধারাটির তথ্য দেখুন [শুধুই প্রয়োজনীয় অংশ]।

“21 : Appeal from Joint District Judge, etc : (1) Save as aforesaid, an appeal from a decree or order of a Joint District] Judge shall lie-

(a) to the District Judge where the value of the original suit in which or in any proceeding arising out of which the decree or order was made did not exceed five crore Taka and

(b) to the High Court Division in any other case.

(2) Save as aforesaid, an appeal from a decree or order of a Senior Assistant Judge or an Assistant Judge shall lie to the District Judge.

(3) Where the function of receiving any appeals which lie to the District Judge under sub-section (1) or sub-section (2) has been assigned to an Additional District Judge, the appeals may be preferred to the Additional District Judge. . . …..”

এর সারকথা হলো –
১. যুগ্ম জেলা জজ কর্তৃক প্রদত্ত কোনো ডিক্রি বা আদেশ এর বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে –

ক. হাইকোর্টে, যদি মোকদ্দমার মূল্যমান ৫ লক্ষ টাকার বেশি হয় ;
খ. জেলা জজ কোর্টে, যদি মোকদ্দমার মূল্যমান ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়।

২. কোনো সিনিয়র সহকারি জজ অথবা সহকারি জজ এর ডিক্রি বা আদেশ এর বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে জেলা জজ এর কাছে।

৩. জেলা জজ চাইলে তার কাছে আসা আপিলগুলো নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত জেলা জজ এর কাছে হস্তান্তর করতে পারেন।

৫ কোটি নাকি ৫ লক্ষ?
দেওয়ানি আদালত আইন, ১৮৮৭ আইনটির ২১ ধারার ১ উপধারার ক অংশে লক্ষ্য করুন যে, সেখানে ৫ কোটি টাকার কথা বলা আছে। এটি মূল আইনে সংশোধিত হয়েছিলো ২০১৬ সালে, তার আগে এখানে ৫ লক্ষ টাকা লেখা ছিলো। কিন্তু সেই সালেই একটি রিটের মাধ্যমে সেটির প্রয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। সে কারণে, মূল আইনে ৫ কোটি লেখা থাকলেও সেটিকে ৫ লক্ষ টাকা আকারে পড়তে হবে। ফলে ৫ কোটি নাকি ৫ লাখ এটি নিয়ে বন্ধুদের সাথে মারামারি করবেন না! 🙂

যাইহোক, তাহলে উপরোক্ত কথাগুলোকে একটি চার্টে সাজিয়ে নিলে কেমন দেখা যাবে সেটি দেখি এবার।

উপরের চার্টের বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু, সেটির মনে হয় দরকার নেই। নিজে সামান্য মেহনত করলেই চার্টের প্রতিটি গ্রাফ বুঝতে পারবেন এবং অন্যান্য তথ্যগুলোও মনে রাখতে পারবেন আশা করি।

এই চার্টটিই আপিলের প্রধান চার্ট দেওয়ানি কার্যবিধিতে। মনে আছে নিশ্চয়ই যে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে খালাস আদেশ, দণ্ডাদেশ, অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশ ইত্যাদি হরেক রকমারি কায়দায় আপিলের বিধান ছিলো। দেওয়ানি কার্যবিধিতে ওরকম ঝামেলা নেই। ঝামেলা অন্য আরো কিছু জায়গায় আছে, সেটি এখানকার আলোচ্য নয়। উপরন্তু, চার্টটি ঠিকমতো মনে রাখতে পারলেই 2/3 নাম্বার অন্তত কনফার্ম হয়ে যাবে বলে আশা রাখি।

দেওয়ানি আপিল করা যায় সাধারণভাবে কোনো ডিক্রি এবং আদেশের বিরুদ্ধে। ডিক্রির প্রকারভেদে কিছু ব্যতিক্রম আছে সেটিও এখানে আলোচ্য নয়; আবার, কোন কোন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে তার একটি তালিকা দেওয়া আছে ৪৩ নং আদেশে। সেই তালিকায় উল্লেখ থাকলে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল চলবে; নচেৎ নয়। আর এটাতো সাধারণ জ্ঞান যে, যেক্ষেত্রে আপিলের বিধান নাই সেক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের স্বার্থে সেখানে সংক্ষুব্ধ পক্ষের রিভিশন করার মাধ্যমে প্রতিকার পাবার সুযোগ আছে।

যাইহোক, কি সিদ্ধান্ত থেকে আপিল করা যায় আর কি থেকে করা যায়না, সেটি আরেকটি লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করার আশা রাখি। আমরা এবার রিভিশন সংক্রান্ত বিষয় দেখি।

রিভিশন সংক্রান্ত দেওয়ানি কার্যবিধিতে সংশ্লিষ্ট ধারা হলো ১১৫ ধারা। এটি এক নিঃসঙ্গ ধারা; এর কোনো সংশ্লিষ্ট আদেশ নেই, যেমনটা অন্যান্য ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট আদেশে বিস্তারিত কার্যপদ্ধতি বর্ণিত আছে।

১১৫ ধারা এমন একটি ধারা যেই ধারাটি অনেকেই একাধিকবার পড়েও বুঝতে বা মনে রাখতে পারেন না। আবার, যিনি এই ধারাটি মনোযোগী পাঠে বুঝে উঠতে পারেন তিনি একজন ভালো আইন পাঠক একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আপনার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কী? পারলে কমেন্টে বইলেন। 🙂 ১১৫ ধারাটি আপনাদের সুবিধার্থে এখানে নিবন্ধটির শেষে তথ্যসূত্র আকারে নিচে দেওয়া থাকলো। সেটি প্রয়োজনে দেখে নেবেন। আমরা মূলত এর সাধারণ কিছু তথ্য আলোচনা করেই এর চার্টটি দেখে নেবো।

রিভিশনের ক্ষমতা বলতে মূলত হাইকোর্ট বা উচ্চতর আদালতের তার অধস্তন আদালতের নথি তলবের ক্ষমতাকে [Power to call for records] বোঝায়। এই নথি তলবের ক্ষমতার কথা ফৌজদারি কার্যবিধিতে ব্যবহৃত হয়েছে, দেওয়ানি কার্যবিধির এই ধারাতেও একই শব্দবন্ধের উল্লেখ আছে। দেওয়ানি কার্যবিধিতে রিভিশনের ক্ষমতা সংক্রান্ত এই ধারাটি আইন প্রণয়নের শুরু থেকেই থাকলেও ১৯৭৮, ১৯৮৩ ও সর্বশেষ ২০০৩ সালের সংশোধনী ও প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তা আরো পূর্ণাঙ্গতা লাভ করেছে। বিশেষ করে দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে পূর্বে শুধু হাইকোর্টের রিভিশন ক্ষমতা ছিলো, কিন্তু বর্তমানে জেলা জজ আদালতও রিভিশনের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। রিভিশন সংক্ষুব্ধ পক্ষের দরখাস্তে করা যায়, আবার হাইকোর্ট নিজের ক্ষমতাতেও এটি করতে পারে। রিভিশন মূলত তিনটি কারণে করা হয়ে থাকে।

১. ডিক্রি বা আদেশটি আপিল অযোগ্য হলে বা আপিলের কোনো বিধান না থাকলে
২. নিম্ন আদালতের কোনো আইনগত ভুলের কারণে
৩. ন্যায়বিচার ব্যাহত হলে

রিভিশন কোথায় শুনানি হবে সে সম্পর্কেও আপিল আদালতের হায়ারার্কির ক্রম মাথায় রাখতে হবে। ১১৫ ধারাটি বিশ্লেষণ করে তার সারসংক্ষেপটি নিচে চার্ট আকারে দিলাম। দেখুন, কাজে দেয় কিনা!

এবার রিভিশন সংক্রান্ত ধারাটি নিচে দিয়ে রাখলাম।

ধারা ১১৫ : রিভিশন [Revision] : ১) কোনো মোকদ্দমায় বা কার্যপ্রক্রিয়ায় জেলা জজ আদালত কিংবা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত ডিক্রি বা আদেশ প্রদান করলে অথবা যুগ্ম জেলা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ অথবা সহকারী জজ ডিক্রি প্রদান করলে, যার বিরুদ্ধে আপিল চলে না; সংক্ষুব্ধ পক্ষের দরখাস্তে হাইকোর্ট বিভাগ নথি তলব করতে পারবে; এবং ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা ঘটিয়ে উক্ত ডিক্রি বা আদেশে উক্ত আদালত আইনের ভুল করেছে বলে প্রতীয়মান হলে হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত ডিক্রি বা আদেশ সংশোধন করতে পারবে, অথবা ইহা যেরূপ উপযুক্ত মনে করে বা কার্যপ্রক্রিয়ায় সেরূপ আদেশ প্রদান করতে পারবে [The High Court Division may, on the application of any party aggrieved, call for the record of any suit or proceedings, in which a decree or an order has been passed by a Court of District Judge or Additional District Judge, or a decree has been passed by a Court of Joint District Judge, Senior Assistant Judge or Assistant Judge, from which no appeal lies; and if such Court appears to have committed any error of law resulting in an error in such decree or order occasioning failure of justice, the High Court Division may, revise such decree or order and, make such order in the suit or proceedings, as it thinks fit.]।

২) যে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল চলেনা, কোনো যুগ্ম জেলার জজ আদালত, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত বা সহকারী জজ আদালত এরূপ কোনো আদেশ প্রদান করলে সংক্ষুব্ধ পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা জজ আদালত উক্ত মোকদ্দমা বা কার্যপ্রক্রিয়ার নথি তলব করতে পারবে; এবং ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা ঘটিয়ে উক্ত আদেশে উক্ত আদালত আইনের ভুল করেছে বলে প্রতীয়মান হলে জেলা জজ আদালত উক্ত আদেশ সংশোধন করতে পারবে এবং যেরূপ উপযুক্ত মনে করে সেরূপ আদেশ প্রদান করতে পারবে [The Court of District Judge may, on the application of any party aggrieved, call for the record of any suit or proceeding, in which an order has been passed by a Court of Joint District Judge, Senior Assistant Judge or Assistant Judge, from which no appeals lies; and if such Court appears to have committed any error of law resulting in an error in such order occasioning failure of justice, the Court of District Judge may, revise such order and, make such order as it thinks fit.]।

৩) জেলা জজ কর্তৃক রিভিশন মোকদ্দমা হস্তান্তরিত হলে উপধারা ২) এর অধীনে জেলা জজের সকল ক্ষমতা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের থাকবে [A Court of Additional District Judge shall have all the powers of the District Judge under sub-section (2) in respect of revision case which may be transferred to it by the District Judge]।

৪) ন্যায় বিচারের ব্যর্থতা ঘটিয়ে ভ্রমাত্মক সিদ্ধান্ত দিলে গুরুত্বপূর্ণ আইনের প্রশ্নে ভ্রমের যেক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ রিভিশনের অনুমতি মঞ্জুর করে সেক্ষেত্রে উপধারা ২) অথবা ৩) এর অধীনে প্রদত্ত জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজের আদেশ পুণর্বিবেচনার জন্য হাইকোর্ট বিভাগে দরখাস্ত করা যাবে এবং হাইকোর্ট বিভাগ যেরূপ উপযুক্ত মনে করে মোকদ্দমা বা কার্যপ্রক্রিয়ায় সেরূপ আদেশ প্রদান করতে পারবে [An application to the High Court Division for revision of an order of the District Judge or, Additional District Judge, as the case may be, made under sub-section (2) or (3) shall lie, where the High Court Division grants leave for revision on an error of an important question of law resulting in erroneous decision occasioning failure of justice, and the High Court Division may make such order in the suit or proceeding as it thinks fit.]।

৫) এই ধারার প্রতিস্থাপনে যাইই হোক না কেন, এরূপ প্রতিস্থাপনের পূর্বে ১১৫ ধারার অধীনে শুরু হওয়া বা পেন্ডিং থাকা কার্যপ্রক্রিয়া সেভাবেই নিষ্পত্তি হবে যেন, ১১৫ ধারাটি প্রতিস্থাপিত হয়নি [Notwithstanding the substitution of this section, any proceeding commenced and pending under section 115 prior to such substitution shall be disposed of in such manner as if section 115 has not been substituted.]।