অনলাইন জুম ক্লাসে

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

২৪ জুন থেকে শুরু

তথ্য জানতে / ভর্তি হতে : 01309-541565

ভাইভা বিষয়ক ভাবনা

একবার ভাবি যে, ভাইভা নিয়ে কি আর বলার আছে? আরেকবার ভাবছি, কিছু কথা বললে হয়তো কিছুটা উপকার কারো কারো হতেই পারে। অনেকেই এইসব বিষয়ে ফেসবুকে নানা পোস্টে লিখছেন, ভালোই লিখেছেনও তারা। তবুও ভাবনার দোলাদুলির ভেতরেই ভাবছি সামান্য কিছু লিখে ফেলা যাক।

প্রথমেই থিওরেটিক্যালি একটা ভীতি দুর করুন – বার কাউন্সিলের কঠিন এমসিকিউ আর লিখিত পরীক্ষায় যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দিয়েই শিক্ষার্থীরা পাশ করার পর যেই ভাইভা অনুষ্ঠিত হবে সেটা একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

আপনি যদি গত কয়েকবারের ভাইভা পরীক্ষার চিত্র লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন অতি সামান্য একটি অংশ ভাইভায় বাদ যায়। আর লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার পর যারা ভাইভায় অংশগ্রহণ করেন, তাদেরকে আর এমসিকিউ বা লিখিত পরীক্ষা দিতে হয় না পরবর্তী আরো দুইটি ভাইবা পর্যন্ত, জানেনই তো! দুশ্চিন্তায় মাথার চুল পাকিয়ে ফেলবেন না।

একটি পরীক্ষার সংখ্যাতত্ত্ব বিশ্লেষণ করতে পারেন আপনারা। কোনো একটি লিখিত [সম্ভবত ২০১৪ সালের পরীক্ষায়] পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৫,৮০০ শিক্ষার্থী। সেখান থেকে আনুমানিক ৩৪০০ জন সেই লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার পরে ভাইভা পরীক্ষা থেকে মাত্র ১৩০ জনের মতো বাদ পড়েন। তার মানে, ভাইভা পরীক্ষায় অতি সামান্য অংশ বাদ যায়, সেটাও দেখা যাবে অনেকের অনুপস্থিতি বা নিতান্তই কিছুই বলতে না পারার কারণে। [অন্য সালগুলোর এই সংখ্যার হিসেব কারো জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন। সেটাও যুক্ত করতে চাই]।

তার মানে লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পরে ভাইভায় টিকে যাওয়াটা প্রায় অতি সামান্য ব্যাপার। হয়তো সহজেই বলছি যে, এটি একটি সামান্য ব্যাপার। কিন্তু যারা পরীক্ষার্থী তাদের বুকের ধকধক শব্দের অনুভূতি শুধু একান্তভাবেই সেই পরীক্ষার্থীর। ফলে একটি আউটলাইন জরুরি।

ভাইভা মূলত কমিউনিকেশন স্কিল যাচাই করে
ভাইভা তুলানমূলক সহজ বিষয় হলেও এর সম্পর্কে তাত্ত্বিক আলোচনা অনেক করা সম্ভব। সে বিষয়ে বিস্তার না করে একটা বেসিক পয়েন্ট দিতে চাই আপনাদের মাথায়। সেটা হলো – ভাইভা পরীক্ষা মূলত আপনার কমিউনিকেশন স্কিল যাচাই করার একটা মাধ্যম। কিন্তু এই কমিউনিকেশন স্কিল জিনিসটা কি? সবচে সহজ একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যেতে পারে। ধরুন, আপনাকে জিজ্ঞেস করলো যে, আপনার নাম কি? আপনি সরাসরি আপনার নামটি না বলে বলতে থাকলেন যে, আমার বাবা এই নাম রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নানা নাম রেখেছে অমুক। এবং আমার নাম ……। আপনাকে জিজ্ঞেস করলো একটা, উত্তর দিলেন আরেকটা বা পেচিয়ে। প্রপার উত্তরে পৌঁছাতে আপনি সময় নিলেন। এটা গুড কমিউনিকেশন স্কিল নয়। অর্থাৎ যা প্রশ্ন করবে সেটার টু দ্য পয়েন্টে প্রপার উত্তরটা দিয়ে দিতে হবে।

তো, এই কমিউনিকেশন স্কিলটি ভাইভা বোর্ডে কিন্তু লক্ষ্য রাখা হয়। আদালতে আপনি একজন বিচারকের সাথে কমিউনিকেশন করতে পারবেন কিনা, সেটা চেক করাটা তাদের জন্য আবশ্যক। ফলে আপনাকে জিজ্ঞাসিত যেকোনো প্রশ্নের টু দ্য পয়েন্টে উত্তরটা দিতে হবে। গুড কমিউনিকেশন স্কিলের প্রকাশ ঘটাতে হবে।

পোশাক ও প্রবেশ
ভাইভাতে কি পোশাকে যাবেন সেটা সংশ্লিষ্ট নোটিশেই বলে দেবে। এ নিয়ে আগেই ফেসবুকে তর্কাতর্কি শুরু করে দেবেন না! [আমি কি পাগলকে নৌকা না নড়ানোর কথা বলে ফেললাম নাকি! আল্লামালুম!!]

ভাইভা রুমে দরজা দিয়ে ঢুকেই প্রবেশের [যদিও প্রবেশ করেই ফেলেছেন :D] অনুমতি নেবেন। চেয়ারের সামনে গিয়ে বসার জন্য অনুমতি নেবেন। বসার ভঙ্গিটি বিনয়াবনত হতে হবে। মনে রাখবেন, বিচার অঙ্গণের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানুষগুলোর সামনে আপনি বসছেন।

ভাইবার প্রশ্নগুলো কেমন হতে পারে?
ভাইভায় কয়েক ক্যাটেগরির প্রশ্ন সাধারণত করা হয়ে থাকে।

প্রথমত, লিখিত পরীক্ষায় আসা সমস্ত প্রশ্নগুলোর সংশ্লিষ্ট ধারা ও তাত্ত্বিক ধারণা ভালো করে নেবেন। যেই লিখিত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিলেন সেই প্রশ্নপত্র থেকেই সাধারণভাবে ভাইভাতে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার হার বেশি হয়।

দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারার বিষয়বস্তু উল্লেখ করে এর সংশ্লিষ্ট ধারা জিজ্ঞেস করা হয়ে থাকে। সুতরাং, ধারাগুলো ভালো করে দেখে যাবেন। এমসিকিউ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রটিও বিবেচনায় রাখবেন।

তৃতীয়ত, জানেন নিশ্চয়ই যে, আপনার ইন্টিমেশন পর্বের সময়ে আপনার সিনিয়রের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকা মামলাগুলোর একটি কেইস ডায়েরি জমা দিতে হয়। ভাইভাতে সেই কেইস ডায়েরি হাতে করে নিয়ে ঢুকতে হবে কিন্তু। সেই ডায়েরি থেকে মামলাগুলো সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারে। এজন্য লিখিত পরীক্ষায় রেজাল্ট হবার পরেই বা পাশ করার পরেপরেই কোর্টে গিয়ে মামলাগুলো প্রস্তুত করে নেবেন এবং মামলার ডিটেইল বোঝার চেষ্টা করবেন। উক্ত মামলাগুলোর স্টেপগুলো কি কি এবং তা কোন পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছে সে সম্পর্কে প্রপার ধারণা রাখতে হবে।

চতুর্থত, আপনার নিজের ডিটেইল আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারে। কোথায় পড়েছেন, কবে পাস করেছেন, নিজ জেলা কোনটি, কোন কোর্টে ইন্টিমেশন জমা দিয়েছেন, যে জেলায় প্র্যাকটিস করতে চান সেখানকার জেলা জজের নাম কি, আপনার সিনিয়র এর নাম কি ইত্যাদি।

পঞ্চমত, ‘আপনি আইনজীবী হতে চান কেন?’ অথবা ‘আপনি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে প্র্যাকটিস করবেন কি?’ – এই দুইটি কমন প্রশ্ন ভাইভাবোর্ডে জিজ্ঞেস করা হয়ে থাকে। এই প্রশ্নের উত্তর যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস সহকারে দিতে হবে। বলা বাহুল্য, উত্তরটা পজিটিভ হওয়া বাঞ্ছনীয়।

আমার বিবেচনায় এই ছিলো বেসিক কথা। এর বাইরে আপাতত বলার মতো কোনো কিছু পাচ্ছি না।

ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। নিজের যত্ন নেবেন।